রংপুরে গ্রামীণ ঐতিহ্যকে তুলে ধরে নতুন প্রজন্মকে পিঠার সঙ্গে পরিচিত করার প্রত্যয়ে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী জাতীয় পিঠা উৎসব। বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে এ পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশের হাসান। পরে তিনি উৎসবের বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে বাহারি পিঠার সমারোহ দেখেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশের হাসান বলেন, এই পিঠা উৎসবের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম পিঠার সঙ্গে পরিচিত হবে। পিঠার স্বাদ গ্রহণ করবে। গ্রামীণ ঐতিহ্যকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখাতে এ ধরনের উৎসবের গুরুত্ব অনেক। এই পিঠা উৎসব থেকে উদ্যোক্তারা আয় করার সুযোগ পাবেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক এ ডব্লিউ রায়হান শাহ, জেলা কালচারাল অফিসার নুঝাত তাবাসসুম রিমু, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোহাম্মদ শাহ আলম, নাট্য ব্যক্তিত্ব রাজ্জাক মুরাদ। আলোচনা পর্ব শেষে টেলিভিশন-বেতারের শিল্পীসহ স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় লোক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন উৎসবে আসা বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীরা।

এদিকে এবার রংপুরে জাতীয় পিঠা উৎসবে মোট ৩০টি পিঠার স্টল রয়েছে। এসব স্টলে নানান নামের বাহারি পিঠা দিয়ে স্টল পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে। এসব পিঠার মধ্যে পাটিসাপটা, পোয়া, মালপোয়া, হরেক রকমের পুলিপিঠা, নকশি পিঠা, ম্যারা পিঠা, মই পিঠা, দুধ চিতই, গোলাপ পিঠা, ছিপ পিঠা, খিরসা পুলি, ফুল পিঠা, ঝাল পিঠা, সন্দেশ, ঝিনুক পিঠা, ক্ষীর কুলি, তেলের পিঠা, জামাই পুলি, তিল পনির, মোরগ পিঠা, সুন্দরী পিঠা। এছাড়াও রয়েছে পাকান, আন্দসা, কাটা পিঠা, ছিটা পিঠা, গোকুল পিঠা, চুটকি পিঠা, মুঠি পিঠা, জামদানি পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, পাতা পিঠা, বিবিখানা, চুটকি, চাঁদ পাকান, সুন্দরী পাকান, সরভাজা ও পুলিপিঠা।

পিঠা উৎসবে স্টল দিয়ে অংশ নিয়েছেন শিক্ষক ও উদ্যোক্তা রেজিনা সাফরিন। তার স্টল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পিঠা উৎসবে অংশ নিয়ে ভালোই লাগছে। নতুন প্রজন্ম পিঠাই চেনেন না, এই উৎসবে পরিবারের অভিভাবকরা যদি তাদের নিয়ে আসে, তাহলে তারা যেমন পিঠা চিনবে জানবে একই সঙ্গে স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে। সবমিলিয়ে উৎসব জুড়ে প্রায় শতাধিক রকমের পিঠা রয়েছে।

উদ্বোধনের পরই পিঠা প্রেমীদের আনাগোনা বাড়তে থাকে উৎসব প্রাঙ্গণে। বিভিন্ন বয়সী মানুষের ভিড়ে তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। গ্রাহকদের উপস্থিতি দেখে বেচাবিক্রি নিয়ে বেশ আশাবাদী স্টলে থাকা পিঠা বিক্রেতা ও উদ্যোক্তারা।

এদিকে পিঠা উৎসবে ঘুরতে আসা রেজাউল করিম, একেএম সুমন, খোকন সরকার, প্রদীপ কুমার, বিপ্লব হোসেনসহ একঝাঁক তরুণকে দেখা যায় বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে পিঠার স্বাদ নিতে। উৎসবে এসে বাহারি পিঠার সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে খুশি তারা। কথা হলে রেজাউল করিম বলেন, আমরা শহরে থাকি। খুব বেশি পিঠার নাম তেমন জানা নেই। এ ধরনের উৎসব হলে অনেক পিঠার সঙ্গে যেমন পরিচিতি ঘটে তেমনি পিঠার স্বাদও পেয়ে থাকি।

রংপুর জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমির ব্যবস্থাপনায় তিন দিনব্যাপী এই পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা কালচারাল অফিসার নুঝাত তাবাসসুম রিমু জানান, পিঠা উৎসব প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। সেই সঙ্গে প্রতিদিন সন্ধ্যায় রয়েছে লোক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএএ