চাঁদা না পেয়ে মাছ নিয়ে গেল ছাত্রলীগ নেতা
জিয়াউর রহমান
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় চাঁদা না পেয়ে জেলেদের মাছ ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জিয়াউর রহমান (৩৩) নামে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। সোমবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে তিস্তা ব্যারাজ এলাকার ৩ নং ওয়ার্ডের তিস্তা নদীতে এ ঘটনা ঘটে।
সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাতে ভুক্তভোগী জেলে রহমত আলী বাদী হয়ে জিয়াকে প্রধান আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
বিজ্ঞাপন
এ ঘটনায় মাছ নিতে বাধা দেওয়ায় মতিয়ার রহমান (৪৮) নামে এক ইউপি সদস্যকে মারধর করে আহত করার অভিযোগ রয়েছে। আহত ওই ইউপি সদস্য বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
অভিযুক্ত জিয়াউর রহমান উপজেলার দোয়ানী পিত্তিফাটা এলাকার ২ নং ওয়ার্ডের মৃত লিয়াকত আলীর ছেলে। তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের দোয়ানী ইউনিটের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি। তবে তিনি ছাত্রলীগের কেউ নন বলে দাবি করেছেন হাতীবান্ধা উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি।
বিজ্ঞাপন
ইউপি সদস্য দোয়ানী পিত্তি ফাটা এলাকার ডা. মো. দবির উদ্দিনের ছেলে এবং উপজেলার গড্ডিমারী ইউপির ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য। ভুক্তভোগী ও মামলার বাদী জেলে রহমত আলী উপজেলার দোয়ানী পিত্তিফাটা এলাকার ৩ নং ওয়ার্ডের মৃত পাহালি প্রামানিকের ছেলে এবং তিনি দোয়ানী তিস্তা ব্যারাজ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় অসহায় ২২ জন জেলে নিয়ে গঠিত দোয়ানী তিস্তা ব্যারাজ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। সেই সমিতির সভাপতি জেলে রহমত আলী। তার নেতৃত্বে ব্যারাজের পেছনের তিস্তা নদী থেকে জাল দিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন সমিতির সকলে। দুই বছর আগে থেকে চাঁদার জন্য জেলেদের নদী থেকে মাছ ধরতে বাধা দিয়ে আসছিল জিয়াউর রহমান। এরই মাঝেই বেশ কয়েকবার চাঁদার টাকা না পেয়ে ঝামেলা করে ২-৩ কেজি করে বৈরালী মাছ নিয়ে চলে যায়। মাছের দাম না দিয়ে আবার জেলেদের কাছে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন।
সোমবার (১৯ এপ্রিল) জেলেরা তিস্তা ব্যারাজ এলাকার ৩ নং ওয়ার্ডের তিস্তা নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরছিল। এ সময় জিয়াসহ কয়েকজন সেখানে গিয়ে মাছ ধরতে বাধা দেন। ১০ হাজার টাকা না দিলে মাছ ধরতে পারবে না তারা। এ সময় রহমত আলীসহ অন্যরা চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে জিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে জেলেদের ধরা ৮০০ টাকা মূল্যের বৈরালী মাছ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় রহমত বাধা দিলে জিয়া তাকে মারধর করেন।
পরে গড্ডিমারী ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান ছুটে এসে রহমতকে রক্ষা করে জিয়াকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু জিয়া চলে না গিয়ে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ইউপি সদস্যের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করান।
এ বিষয়ে উপজেলার দোয়ানী ইউনিট শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, ওরা নিজেরাই চলতে পারে না। কোন রকম মাছ ধরে দিন পার করে। ওরা ১০ হাজার টাকা কই পাবে? আমি তাদের কাছে কোন চাঁদা দাবি করিনি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
আহত ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান বলেন, জিয়া প্রায়ই জেলেদের ওপর অত্যাচার করে। জেলেরা অনেক কষ্টে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা ১০ হাজার টাকা কই পাবে? উল্টো টাকা ছাড়া মাছ নিয়ে যায়। বাধা দেওয়ায় রহমতকে মারধর করে। আমিও বাধা দিতে গিয়ে জিয়ার মারধরের শিকার হই। আমি জিয়ার বিচার চাই।
হাতীবান্ধা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফাহিম শাহরিয়ার জিহান বলেন, জিয়া বর্তমানে ছাত্রলীগের কেউ না। দোয়ানী শাখা ছাত্রলীগের কমিটির সাবেক সভাপতি। এখন ছাত্রলীগের কোন পদে বা কমিটিতেই নেই। সে সম্ভবত যুবলীগের রাজনীতি করে।
হাতীবান্ধা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নিয়াজ আহমেদ সিপন/এসপি