রেলওয়ে চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেছেন, চাঁদপুরের ৩ নদীর মোহনাকে কোনো ধরনের পরিবর্তন না করে প্রাকৃতিকভাবে থাকা স্থানটির আরও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হবে। এখানে যেসব গাছ আছে সেগুলো থাকবে এবং আরও নতুন করে শ্রীবৃদ্ধির জন্য গাছ লাগানো হবে। এ ছাড়াও সবুজায়ন করার লক্ষ্যে এখানকার ভূমিতে ঘাস লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। একইসাথে এখানে হাঁটার জন্য ফুটপাত তৈরি এবং ক্যাফেটেরিয়া থাকবে। যাতে করে দর্শনার্থীদের বিভিন্নভাবে সেবা প্রদান করা যায়।

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চাঁদপুর রেলস্টেশনের অবকাঠামোসহ ৩ নদীর মোহনার উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, তিন নদীর মোহনায় যে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা, এটাকে একটি নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরে আনা। অর্থাৎ চাঁদপুরবাসী যেন সেখানে অবসর সময় কাটানো এবং বিনোদন উপভোগ করতে পারে।

এ সব উন্নয়নে কি পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ হয়েছে? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আর্থিক ব্যয়ের পরিমাণ এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে পর্যায়ক্রমে উন্নয়ন করা হবে। উন্নয়নের চাহিদার আলোকে ধাপে ধাপে বরাদ্দ এবং ব্যয় হবে।

মহাব্যবস্থাপক বলেন, রেলওয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজগুলো পরিদর্শন করা হচ্ছে নিয়মিত কাজ। তারই অংশ হিসেবে চাঁদপুরে আসা। এখানে আমাদের বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ চলমান আছে সেগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। আর এখানে যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সেগুলোকে পরে কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে পরিকল্পনাও করা হবে।

চাঁদপুর-কক্সবাজার ট্রেন চালু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের যে পরিকল্পনা অর্থাৎ যাত্রীদের চাহিদার আলোকে ট্রেনের সময় সূচি নির্ধারণ করি। এটি আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে ভবিষ্যতে এই রুট বর্ধিত করতে পারি। তবে দীর্ঘদিন যেহেতু চাঁদপুর-চট্টগ্রাম যাত্রী চলাচল করছে, সেখানে হুট করে চাঁদপুর থেকে কক্সবাজার ট্রেন চালু করলে চট্টগ্রামের যাত্রীদের আসন কীভাবে দেওয়া হবে। এছাড়া একটি নতুন রুট চালু করার জন্য নতুন ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টারের প্রয়োজন আছে। এটির সাথে অনেক কিছু জড়িত আছে।

তিনি আরও বলেন, কবে থেকে চাঁদপুর-কক্সবাজার ট্রেন চালু হবে তা বলতে পারছি না। তবে আমাদের কক্সবাজার স্টেশনের কাজ এখন শেষ পর্যায়। সেখানে কিছু ব্রিজ ও অবকাঠামোগত কাজ চলমান। সবকিছু শেষ হওয়ার পর আমরা আশাবাদী অচিরেই চাঁদপুর-চট্টগ্রাম ট্রেন চালু হতে পারে।

চাঁদপুর-চট্টগ্রামের মধ্যে চলাচলকারী মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি আরও আধুনিক করা হবে কি না— প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, এই ট্রেনটিতে এখন যাত্রীদের কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না। এটি আধুনিক করা হবে, তবে সময় লাগবে। কারণ পদ্মা সেতু নির্মাণের পরে লঞ্চে দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা যাত্রী সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তা আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি। তবে আমরা সব সময় যাত্রীর চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি।

এদিকে রেলওয়ের কর্মকর্তারা পরিদর্শনে এলে রেল লাইনের পাশে থাকা শহরের বাণিজ্যিক এলাকাগুলোর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সরিয়ে ফেলা হয়। কর্মকর্তারা চলে গেলে আবারও বসানো হয়। এসব বিষয়ে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে মহাব্যবস্থাপক বলেন, চট্টগ্রাম থেকে রেল লাইনে চাঁদপুরের দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার। সেখান থেকে এসে এসব অবৈধ স্থাপনা আমরা নিয়মিত তদারকি কিংবা উচ্ছেদ করতে পারব না। এখানকার স্থানীয় প্রশাসন এবং সচেতন নাগরিকরা এগিয়ে না এলে আমাদের একার পক্ষে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তারপরেও আমাদের পরিকল্পনা আছে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে রেলওয়ের সম্পত্তি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনা। কোনোভাবেই অবৈধ দখলদারদের সুযোগ দেওয়া হবে না।

বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম, প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী, বিভাগীয় প্রকৌশলী (১) মো. হানিফ, বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা তারেক মো. ইমরান, সিনিয়র উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ ও পূর্ত) লাকসাম মো. লিয়াকত আলী মজুমদার, রেলওয়ে নিরাপত্তা বিভাগের চিফ ইনচার্জ মো. সালামত উল্লাহ, চাঁদপুর স্টেশন মাস্টার (ভারপ্রাপ্ত) সোয়াইবুর শিকদার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মহাব্যবস্থাপকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা তিন নদীর মোহনাসহ স্টেশনের উন্নয়ন কাজ ও অবৈধ স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করেন।

আনোয়ারুল হক/এমএ