পাচার হয়ে বাংলাদেশে আসা সঙ্গীতা মন্ডল এবার নিজ জন্মভূমি ভারতে ফিরতে চান। শুধুমাত্র নিজের মা-বাবার খুনের বিচার চাইতে ফিরবেন তিনি। এজন্য ভারত সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছেন ওই তরুণী। শৈশবের হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলো আর ছয় বছর বয়সে বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর নানা বঞ্চনার মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত আসা তার কাছে পরম বিস্ময়। বর্তমানে সঙ্গীতা মন্ডল বরিশালের বিসিক শিল্প নগরীর রীণা কটন মিলসের স্বত্বাধিকারী নাজমুন নাহার রীণার কারখানায় কাজ করছেন।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, কাজে ব্যস্ত সঙ্গীতা। সেখানে কথা হয় তার সঙ্গে। 

সঙ্গীতা বলেন, আমার বাড়ি কলকাতার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের ভুরগাছি গ্রামে। বাবা গুরুপদ মণ্ডল, মা পার্বতী মণ্ডল। আমার চাচা রাহুল মণ্ডল। যখন আমার বয়স আনুমানিক পাঁচ অথবা ছয় বছর তখন চাচার কারণে আমার মা-বাবা খুন হন। আমি সেসবই চোখের সামনে দেখেছি। তারপর চাচা আমাকে এক লোকের কাছে বিক্রি করে দেন। তিনি আমাকে বেনাপোলে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে কিছু দিন মাদারীপুর কারাগারে ছিলাম। ওখান থেকে আমাকে বরিশাল সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। ওই কেন্দ্রে কাজ শিখে বর্তমানে রীণা কটন মিলসে নিযুক্ত হয়েছি।

তিনি বলেন, আমি আমার চাচার ফাঁসি চাই। তার জন্য আমাকে এতিম হতে হয়েছে। আমার জীবন বলতে এখন আর আসলে কিছুই নেই। শুধু ভেসে ভেসে বড় হচ্ছি।

রীণা কটন মিলসের স্বত্বাধিকারী নাজমুন নাহার রীণা বলেন,  সঙ্গীতা আমাকে যা বলেছে তা খুবই হৃদয়বিদারক। ওর মা ছিল খুবই সুন্দরী। ওর চাচা বিভিন্ন সময়ে ওর মাকে উত্ত্যক্ত করতো। এ নিয়ে পরিবারেও বেশ ঝামেলা ছিল। একদিন এসব বিষয় নিয়ে বিরোধে ওর মা ওর বাবাকে চাকু মারে। ঘটনাস্থলে ওর চাচাও ছিল। ক্ষিপ্ত হয়ে ওর চাচা সঙ্গীতার মাকেও মেরে ফেলেন। এরপরে সঙ্গীতাকে তার এক পরিচিত লোকের মাধ্যমে বেনাপোলে পাঠিয়ে দেন। সেখানে এক বছর ভিক্ষা করেছে সঙ্গীতা। ওখানে একদিন ধর্ষণচেষ্টার শিকার হলে একজনকে মারধর করে। পরে ওকে আটক করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। সেখান থেকে তাকে সামাজিক  প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

তিনি আরও বলেন, সঙ্গীতা আমার কাছে যা বলেছে তাতে ওর মা-বাবা খুন হয়েছে। মূলত ভারতে গেলে জানা যাবে আসলে কী ঘটনা ঘটেছে। যদি ওর মা-বাবা খুন হয় তাহলে বিচার পেতে যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে তার জন্য বাংলাদেশ সরকার আমাদের সহায়তা করবে বলে আশা করি।

রীণা বলেন, আমি সমাজের অসহায় মেয়েদের নিয়ে কাজ করছি। কারণ আমিও এক সময় অসহায় ছিলাম। আমার স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পরে দুটি সন্তান নিয়ে অসহায় অবস্থায় সংগ্রাম শুরু করি। সেজন্য অসহায়দের কষ্ট আমি বুঝি।

সমাজসেবা অধিদপ্তর বরিশালের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, সঙ্গীতা মন্ডল মাদারীপুর শিশু আদালতের আদেশক্রমে ২০১৭ সালে বরিশাল সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে আসে। তিন বছর থেকে ওখানে কাজ শিখেছে। আদালতের নির্দেশেই ২০২০ সালে তাকে পুনর্বাসন করি স্থানীয় একটি বুটিকস হাউজে। সেখান থেকে সে চলে আসে রীণা কটন মিলসে।

তিনি বলেন, সঙ্গীতা মন্ডলের বাড়ি ভারতে। যতদূর জানি ওর মা-বাবা মারা গেছেন। ওর আত্মীয়-স্বজন ওখানে আছে। সঙ্গীতা ওর আত্মীয়-স্বজনের কাছে যাওয়ার জন্য খুবই কান্নাকাটি করে। আমি বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন আর বরিশালে ভারতীয় যে ভিসা সেন্টার রয়েছে সেখানে আলাপ করব। ও যেন ওর আপন নিবাসে ফিরে যেতে পারে সেজন্য আমি আমার সর্বাত্মক সহায়তা করব। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর