মসিক নির্বাচন
প্রতীক নিয়ে প্রচার যুদ্ধে প্রার্থীরা
জাতীয় নির্বাচনের পর এবার ডামাডোল বেজে উঠলো ময়মনসিংহ সিটির। তফসিল অনুযায়ী ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয় শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি)। এর মাধ্যমে এ সিটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়েছে।
এদিন নগরীর অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি মিলনায়তনে পাঁচ মেয়র প্রার্থী ও ২১৮ কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্য প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন চৌধুরী।
বিজ্ঞাপন
সকালে শুরুতে মেয়র প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে সরব হয়ে ওঠেন প্রার্থীরা। মেয়র পদে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী শহিদুল ইসলাম স্বপন মন্ডল পেয়েছেন দলীয় প্রতীক লাঙ্গল, স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য পদত্যাগ করা সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু পেয়েছেন দেয়াল ঘড়ি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম পেয়েছেন ঘোড়া, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু পেয়েছেন হাতি এবং কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাবেক সদস্য ড. রেজাউল হক হরিণ প্রতীক পেয়েছেন। পরে সাধারণ এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ সময় কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়।
সদ্য সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটু ঘড়ি প্রতীক পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাউন হল এলাকায় স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তুলে হাজারো কর্মী সমর্থকরা। এ সময় মেয়রপ্রার্থী টিটু ছাদখোলা গাড়িতে উঠে ‘ঘড়ি’ মার্কার প্ল্যাকার্ড উঁচিয়ে ধরে স্লোগান ধরেন- ‘সময়ের সঙ্গে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন, ৯ তারিখ ঘড়ি মার্কায় ভোট দিন।’ এরপর নগরীর স্টেশন মসজিদে জু’মার নামাজের পর মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করেন তিনি। এছাড়া অন্যান্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রতীক পেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন। দুপুরের পর থেকে শুরু হয়েছে মাইকিংও।
বিজ্ঞাপন
সদ্য সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, দীর্ঘদিন নগরীতে কাজ করার সুবাদে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু কোভিড ও ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সকল কাজ অনুমোদন হয়নি এবং বাস্তবায়ন করা যায়নি। তিনি আরও বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে নগরবাসীর কাছে সুযোগ চাচ্ছি। আশা করছি নগরবাসী ভোটের মাধ্যমে আমাকেই নির্বাচিত করবে। সম্মানিত ভোটার বৃন্দের ভোট ও আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেয়র প্রার্থী এহতেশামুল আলম বলেন, চারদিকে মানুষ পরিবর্তন চাচ্ছে। ভোটের মাধ্যমে মানুষ তাদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।
হাতি প্রতীক নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করেন সাদেকুল হক খান মিল্কী টজু। তিনি বলেন, গেল নির্বাচনে মেয়র পদে মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি। এবার মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। মানুষ অবশ্যই যোগ্য প্রার্থী হিসেবে আমাকেই ভোট দিবে। নাগরিক সমস্যা লাঘব করে একটি স্মার্ট সিটি উপহার দিতে চাই নগরবাসীকে।
টিটুর বিরুদ্ধে একক প্রার্থী দিতে ব্যর্থ এমপি শান্ত
সংসদ নির্বাচনে সৃষ্ট বিভেদের পর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে সংসদ সদস্য ও মহানগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমানের সমর্থনের আশায় ছিলেন কয়েকজন প্রার্থী। সেক্ষেত্রে সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটুর বিরুদ্ধে একক প্রার্থী নির্বাচন করতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন এমপি শান্ত। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শান্ত নিজের ফেসবুকে চার মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে তোলা সেলফি দিলে শুরু হয় নানা জল্পনা। ছবিতে তার সঙ্গে প্রার্থী এহতেশামুল আলম, সাদেক খান মিল্কী, ফারামার্জ আল নূর রাজীব ও মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া গোলাম ফেরদৌস জিলু ছিলেন।
সূত্র জানায়, একক প্রার্থী নির্বাচন করতে তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেও শেষ পর্যন্ত একক প্রার্থী রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন এমপি শান্ত। বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে এমপির নির্দেশনায় রাজীব মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেও রয়ে গেছেন এহতেশামুল আলম ও সাদেক খান। স্থানীয় নেতারা বলছেন, একই দলের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী থাকায় এর সুবিধা পাবেন টিটুই। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, মেয়র পদে ইকরামুল হক টিটুই পছন্দ সবার। তার সঙ্গে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারবে না।
এ সিটি নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯০ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭১ পুরুষ, ১ লাখ ৭২ হাজার ৬১০ নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৯ জন। তারা আগামী ৯ মার্চ ইভিএমে ১২৮ কেন্দ্রে ভোট দেবেন। মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থী ছাড়াও নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে যাচাই ও আপিলে ১৫৮ জনের প্রার্থিতা টেকে। ৯ জন সরে যাওয়ায় বর্তমানে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ১৪৯ এবং ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী আছেন ৬৯ জন।
উবায়দুল হক/এএএ