বরগুনা জেলায় নেই কোনো বিমানবন্দর কিংবা হেলিপ্যাড। এ জেলা সদরের প্রবেশের আগে পৌরসভার টাউনহল মাঠ প্রাঙ্গণে দেখা মিলবে একটি হেলিকপ্টার। সেই হেলিকপ্টারে চড়ে বসতে পারবেন, সময় কাটাতে পারবেন। এটি দেখতে হেলিকপ্টার হলেও আদতে এটি একটি রেস্টুরেন্ট। যা হেলিকপ্টারের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে। পটুয়াখালীর তিন বন্ধু মিলে এ রেস্টুরেন্টটি দিয়েছেন। প্রতিদিন হেলিকপ্টারটি দেখতে ভিড় করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর ১৬ ডিসেম্বর পটুয়াখালীতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ভ্রাম্যমাণ হেলিকপ্টার রেস্টুরেন্টির উদ্বোধন করা হয়। এর প্রায় দুই মাস পর সাধারণ মানুষদেরকে হেলিকপ্টারটিকে দেখাতে নিয়ে আসা হয়েছে বরগুনায়। এ ছাড়া দেশের প্রতিটি জেলার মানুষকে দেখাতে হেলিকপ্টারের আদলে এ রেস্টুরেন্টটি নিয়ে সব জেলা ভ্রমণ করবেন এর উদ্যোক্তারা। 

এর আগে পটুয়াখালী সদর উপজেলার ছোট বিঘাই ইউনিয়নের কাজীর হাট বাজারের ওয়ার্কশপ মিস্ত্রি মো. মেহেদি হাসান তার দুই বন্ধু আরিফ ও আল-আমিন মিলে ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে ভিন্ন কিছু তৈরি করার উদ্যোগ নেন। পরে নিজেদের ওয়ার্কশপে প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ করে ৭ মাসের চেষ্টায় ভ্রাম্যমাণ হেলিকপ্টার রেস্টুরেন্টটি তৈরি করেন।

সকাল গড়িয়ে বিকেল হলেই বরগুনার টাউনহল মাঠ প্রাঙ্গণে হেলিকপ্টারটিকে দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। বিশেষ করে বরগুনায় এটি এখন শিশুদের বিনোদনের বিকল্প একটি মাধ্যম। এ ছাড়া হেলিকপ্টার নিয়ে শিশুদের বিভিন্ন কৌতূহল থাকায় শিশুদেরকে নিয়ে ঘুরতে আসেন তাদের অভিভাবকেরা। 

বরগুনার বাঁশ বুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সদর রোড এলাকার বাসিন্দা চন্দন পাল ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে এসে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাচ্চাকে শুধু ছবিতে দেখানো হয় হেলিকপ্টার দেখতে কেমন। তাই বাস্তবে ছেলেকে দেখাতে নিয়ে এসেছি। এখানে এসে আমার ছেলে খেলাধুলা করেছে এবং এটি উপভোগ করেছে।

মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসে রঞ্জিত কুমার সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরগুনায় অনেক রেস্টুরেন্টে থাকলেও আমি মনে করি এটি একটি ভিন্ন আয়োজন। বরগুনায় কোনো হেলিপ্যাড নেই। এ ছাড়া অনেক বাচ্চা খুব কাছে থেকে হেলিকপ্টার দেখেনি। এর মাধ্যমে হেলিকপ্টার সম্পর্কে বাচ্চারা ধারণা পাবে, এটি তাদের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয়। 

ফাতিমা সিকদার নামের এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে এসে ও হেলিকপ্টারটি দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। আমরা এর আগে হেলিকপ্টার দূর থেকে দেখেছি। তবে কাছে থেকে হেলিকপ্টারের আদলে এ রেস্টুরেন্টটি দেখে খুবই ভালো লেগেছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য এটি বিনোদনের একটি ভালো মাধ্যম তৈরি করা হয়েছে। 

ভ্রাম্যমাণ হেলিকপ্টার রেস্টুরেন্টির উদ্যোক্তা তিন বন্ধুর মধ্যে মো. আরিফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের প্রথম চিন্তা ছিল আমরা একটি বড় বিমান তৈরি করব। তবে আর্থিক ব্যবস্থা এবং পরিবারের তেমন সামর্থ্য না থাকায় আমরা ছোট আকারে এ হেলিকপ্টারটি তৈরি করেছি। পরে দেখি এটিও আকারে একটু বড় হয়ে গেছে। পরবর্তীতে এর ভিতরে কি করা যায় এমন চিন্তায় আমার আরেক বন্ধুর পরামর্শে এবং ব্যবসায়িক চিন্তায় একটি রেস্টুরেন্ট তৈরি করি।

বিভিন্ন জেলায় হেলিকপ্টার রেস্টুরেন্টটি নিয়ে ঘুরতে কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে কিছু সমস্যায় পরতে হয়। হেলিকপ্টারটি বিভিন্ন গাড়ির সঙ্গে যুক্ত করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিতে হয়। ভিন্ন জেলার কেউ আমাদের না চেনায় প্রথমে অনেকে ইতস্তত বোধ করেন। তবে আমাদের এ কার্যক্রম কাছ থেকে দেখার পরে সকলেই বিষয়টি ভালো চোখে দেখেন। 

আরিফ আরও বলেন, আমরা কারো কাছ থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সহযোগিতা চাই না। জেলা পর্যায়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক, ইউএনও, মেয়র যারা রয়েছেন তারাসহ পুলিশ প্রশাসন যদি আমাদেরকে সহযোগিতা করেন এবং বিভিন্ন পরামর্শ দেন তাহলে আমরা আমাদের এ কার্যক্রম ঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারব। 

ভ্রাম্যমাণ হেলিকপ্টার রেস্টুরেন্টটিতে বর্তমানে তিন বন্ধুসহ মোট সাতজন কর্মরত রয়েছেন। প্রতিদিন এ রেস্টুরেন্ট থেকে গড়ে ১০ হাজার টাকার বিভিন্ন ধরনের খাবার বিক্রি হয়। এ আয়ের টাকায় কর্মরত চারজনকে মাসে মোট ৩৩ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। বাকি টাকায় প্রতিমাসে তিন বন্ধু তাদের নিজেদের ধার দেনা পরিশোধ করেন।

মো. আব্দুল আলীম/এএএ