উপকূলজুড়ে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট

বাগেরহাটের উপকূলজুড়ে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। মাসব্যাপী পানি সংকটে জেলার কয়েকটি উপজেলার শত শত মানুষ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশুদ্ধ পানির জন্য এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছুটে যাচ্ছেন।

তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে পানির উৎসগুলো (পুকুর-খাল) শুকিয়ে যাওয়ায় শুধু খাবার পানিই নয়, রান্নার পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের পাঁচটি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট পানি সরবরাহ শুরু করেছে।

কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় কিছু ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে পানি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন উপকূলবাসী। এদিকে বিভিন্ন উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে ফুটিয়ে ও বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করে পানের আহ্বান স্বাস্থ্য বিভাগের।

শরণখোলার খুড়িয়াখালী গ্রামের গৃহবধূ শাহিদা বেগম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কোনো টিউবওয়েল বসে না। তাই পুকুর ও বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু এ বছর গরমের কারণে পুকুরের পানি শুকিয়ে গেছে। আশে-পাশের খালে লবণাক্ত পানি। বাধ্য হয়ে লবণপানিতে গোসল রান্না ও খাওয়ার কাজে ব্যবহার করতে হয়। এই পানি খেয়ে মাঝে মাঝে পেটে ব্যথা ও অসুস্থ হয়ে পড়ি।’

অনাবৃষ্টিতে শুকিয়ে গেছে বেশিরভাগ পুকুর

পানিরঘাট এলাকার রমিসা বেগম বলেন, ‘কলস নিয়ে অন্য গ্রামে (চালিতাবুনিয়া) পুকুরের পানি সংগ্রহ করে আনতে হয়। রোজার দিনে আমরা পানির কষ্ট কখনো দেখিনি। কোনো বৃষ্টি নেই, পুকুরে পানি নেই। পরিবারের দুজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে দশ দিন ভর্তি ছিল।’

মোড়েলগঞ্জের নিকারিপাড়া গ্রামের আয়েশা বেগম বলেন, ‘২৮ দিন পর এই মেশিন দিয়ে এক কলস পানি নিলাম। পরিবারের চারজন। তিন বেলা পরে আরও একবার নিতে আসব। এইভাবে পানি নিয়ে তো আর বেঁচে থাকা যায় না।’

রায়েন্দাবাজারের মোতালেব হাওলাদার বলেন, ‘গাড়িতে করে পানি দিচ্ছে। দুই ঘণ্টা সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থেকে পানি নিলাম। গরমের মধ্যে এইভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ একটু খাবার পানির জন্য অপেক্ষা করছে।’

রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, আমাদের উপজেলার চারটি ইউনিয়নে লবণাক্ততার কারণে অগভীর নলকূপ স্থাপন হয় না। প্রায় দেড় লাখ মানুষ পুকুর ও বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করে তৃষ্ণা মেটায়। কিন্তু এবার একদিকে গরম, অন্যদিকে বৃষ্টি না হওয়ায় পানির উৎসগুলোতে কোনো পানি নেই।

বাগেরহাট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী এফএম ইসমাইল হোসেন বলেন, উপকূলজুড়ে তীব্র পানির সংকটের খবর পেয়ে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। পরে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বাগেরহাটের মোংলায় দুটি, মোড়েলগঞ্জে একটি ও শরণখোলায় দুটি ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক আ ন ম ফয়জুল হক বলেন, শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, রামপাল, মোংলা— এ চার উপজেলায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। শুষ্ক মৌসুম এবং অনাবৃষ্টিতে বেশিরভাগ পুকুর শুকিয়ে গেছে। ফলে উপজেলার হাজার হাজার পরিবারে সুপেয় পানির হাহাকার চলছে। ডায়রিয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

তানজীম আহমেদ/এমএসআর