আবদুস সালাম

সিলেটে কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এক তরুণীকে দুই মাস আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাতে ভুক্তভোগী তরুণীর মা বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা করেছেন।

রোববার (৩১ মার্চ) সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সুমন কুমার চৌধুরী বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন- সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও নগরের লালদীঘিরপাড় এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে আবদুস সালাম (৪০); একই এলাকার ইশাদ মিয়ার ছেলে আবদুল মনাফ (৩৮) এবং রেখা বেগম (৩০) নামের এক নারী। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও দুই থেকে তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী তরুণী নগরের শেখঘাটের একটি কারখানায় কাজ করতেন এবং শহরের একটি এলাকায় বসবাস করতেন। অভিযুক্ত রেখা বেগম তার প্রতিবেশী। ভুক্তভোগীকে শহরের বাসায় রেখে গ্রামে বেড়াতে যান স্বজনরা। এ সময় ওই তরুণীকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবদুস সালামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন রেখা। ভুক্তভোগীকে বলেন, ‘সালাম নেতা টাইপের লোক, বিপদে-আপদে উপকারে আসবে।’ গত ৭ জানুয়ারি রেখার মাধ্যমে তরুণীকে নিজের বাসায় নিয়ে যান সালাম। এরপর টানা ২২ দিন সালাম তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন। এর মধ্যে ওই তরুণীর মা-বাবা গ্রাম থেকে শহরে ফিরে আসেন। বাসায় মেয়েকে না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে যেতে চাইলে প্রতিবেশী রেখা বেগম তাদের সালামের কাছে নিয়ে যান। সালাম তাদের জিডি করতে নিষেধ করে নিজেই খুঁজে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এর দু-তিন দিন পর তরুণীর মা-বাবা আবার সালামের কাছে গেলে তিনি বিকেলের দিকে ফিরিয়ে আনার কথা জানান।

ওই দিন বিকেলে তরুণীকে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে সালাম জানান, তরুণী এক প্রবাসীর বাসায় কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই উদ্ধার করেছেন। স্বজনরা প্রবাসীর নাম জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। একপর্যায়ে তরুণী মা-বাবাকে আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনাটি জানালে সালাম তাদের হত্যার হুমকি দেন এবং বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন।

এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, ঘটনার তিন দিন পর আবার কাজে যাচ্ছিলেন তরুণী। তখন সালাম বিয়ে ও ভালো জায়গায় কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাকে বাসা থেকে বেরিয়ে আসতে বলেন। কথামতো সালামের সঙ্গে আবার দেখা করেন ওই তরুণী। তিনি তরুণীকে কিছু টাকা দিয়ে নগরের কাজীরবাজার এলাকায় এক বন্ধুর বাসায় পাঠান। সেখান থেকে অভিযুক্ত মনাফ তাকে হবিগঞ্জের বাহুবলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে আটকে রেখে সালাম-মনাফসহ একাধিক ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী কৌশলে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গত ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় সিলেটে পালিয়ে আসেন। স্বজনরা তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করেন। চিকিৎসা শেষে তরুণীর মা বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) সুমন চৌধুরী বলেন, ভুক্তভোগী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলাটি আমরা তদন্ত করছি। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। স্বেচ্ছাসেবক লীগে এই ধরনের কর্মকাণ্ডের কোনো স্থান নেই। কেউ যদি এরকম ঘটনা ঘটায় তবে অবশ্যই আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এই বিষয়ে আমার কমিটির সভাপতির সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।

মাসুদ আহমদ রনি/এমজেইউ