ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি রুচির পরিবর্তন ও আভিজাত্য প্রকাশে ফেনীতে গত কয়েক বছরে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্র্যান্ডের বাজার। সোমবার (১ এপ্রিল) শহরের শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়কে বিভিন্ন অভিজাত ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেলেও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম।

ফেনীর বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের ভাষ্যমতে, চলতি বছরের ঈদ উপলক্ষ্যে ব্র্যান্ডের আউটলেটগুলোতে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ক্রেতা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। এ অবস্থায় উদ্বেগে রয়েছেন ফেনীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

এ প্রসঙ্গে ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সময়ের সঙ্গে মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। এ ছাড়া ফেনীর মানুষ কিছুটা বিলাসী। সবমিলিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে ফেনীর ঐতিহ্যবাহী বড় বাজারের সাধারণত সকল শ্রেণির ক্রেতা সমাগম ঘটে। সেখানে এটির প্রভাব খুব একটা পড়েনি। সাধারণ ক্রেতারা আরও সচেতন হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।  

জহিরুল ইসলাম নামে বড় বাজারের এক বস্ত্র ব্যবসায়ী বলেন, শহরের অভিজাত ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে একদামে পণ্য সামগ্রী বিক্রি হয়। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঈদ উপলক্ষ্যে অনেকে দামের জায়গায় আবার নতুন করে বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এটা ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া কিছুই না।

আবুল খায়ের নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, গত দুয়েকবছর রমজানে আগের মতো সাধারণ ক্রেতাদের তেমন সাড়া পাচ্ছি না। সারাবছর এতো টাকা পুঁজি দিয়ে ঈদ উপলক্ষ্যে বেচাকেনা করতে না পারা আমাদের জন্য কষ্টকর। ক্রেতারা বেশিরভাগই এখন ব্র্যান্ডিং প্রতিষ্ঠানের দিকে ঝুঁকছে।

তাজুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী নেতা বলেন, অন্যান্য বারের চেয়ে মার্কেটে বেচাকেনায় কিছুটা প্রভাব পড়েছে। ব্যবসায়ীরা ঈদ উপলক্ষ্যে নতুনভাবে বিনিয়োগ করেছে। ঈদেও যদি মন্দাভাব হয় তাহলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তবে দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আশানুরূপ বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছি।

শাহীন নামে আরেক ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ব্র্যান্ডিং প্রতিষ্ঠান বাড়লেও সারাবছর সাধারণ দোকানে যে পরিমাণ বিক্রি হয়, তার বড় একটি অংশ এখনো নন ব্র্যান্ডের। ক্রেতারা সচেতন হলে ঈদ উপলক্ষ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভালো সম্ভাবনার রয়েছে। তিনি বলেন, ব্যবসা একটা কাঠামোর মধ্যে ‍নিয়ে আসা প্রয়োজন। যেভাবে চলছে, এভাবে হলে সাধারণ ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।  

ক্রেতারা বলছেন, দামে বেশি হলেও মানের কথা চিন্তা করে তারা শো-রুমগুলোতে ঈদের পোশাক কিনতে আসছেন। কিছু ক্রেতা অভিযোগ করেন, কতিপয় শো-রুমের পণ্যে চাকচিক্য থাকলেও মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। জাঁকজমক উপস্থাপনের মাধ্যমে ক্রেতাদের পকেট হাতিয়ে নিচ্ছে অনেকে।  

নতুন ভাবে বাড়িয়ে দাম নির্ধারণের ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের একটি ব্র্যান্ডিং প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন করে প্রাইজ ট্যাগ বসানো ঠিক না। তবে কোম্পানি দাম বাড়িয়ে দিলে  মাঝে মধ্যে আগের দামের জায়গায় নতুন করে দাম বসাতে হয়। আমরা একই দামে দেশের বিভিন্ন আউটলেটে পণ্য বিক্রি করি। সেক্ষেত্রে দামের ব্যবধান করার সুযোগ নেই। 

ইজি শপিংয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত ক্রেতাদের বেশ সমাগম রয়েছে। বাজার পরিস্থিতি এমন থাকলে আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

এদিকে ব্র্যান্ডিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফেনীর মানুষের সুফল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিশাদ আদনান নামে এক তরুণ উদ্যোক্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্র্যান্ডিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে শুধু টাকা দিয়ে টাকা বের করা হয়। অন্য কোনো গল্প নেই। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করা বেশিরভাগ কর্মীই ফেনীর বাইরের। আর যা বেচাকেনা হয় পরদিন সকালেই তা মেইন ব্রাঞ্চের হিসেবে চলে যায়। অনেক শো-রুম হওয়া মানেই স্থানীয় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের সুযোগ কমে যাওয়া। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের মতো উদ্যোক্তারা ভালোভাবে শুরু করলেও পরে টাকার জন্য আর আগানো সম্ভব হয় না। স্থানীয় ক্ষুদ্র, মাঝারি উদ্যোক্তারা কতটা বেকায়দায় আছে এ খবর কেউই রাখে না। নিজ শহরে ব্যবসার সুযোগ যদি অন্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করে এটির চেয়ে খারাপ আর কিছুই হতে পারে না।

প্রসঙ্গত, চলতি ঈদ মৌসুমে জেলায় ১২০০ থেকে ১৩০০ কোটি টাকার বেচা বিক্রির সম্ভাবনার কথা বলছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

তারেক চৌধুরী/এএএ