ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক-পিকআপে ছুটছে ঘরমুখো মানুষ
গণপরিবহন সংকট, বাসের টিকিট না পাওয়াসহ পথের ভোগান্তি নিয়েই প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে ছুটছে ঘরমুখো মানুষ। সোমবার দুপুরে ছুটি পেয়ে শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুর থেকে লাখ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক ঈদযাত্রায় শামিল হয়েছে। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের ঢল নেমেছে। হঠাৎ মহাসড়কে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে পরিবহন সংকটে পড়েছে যাত্রীরা। পরিবহন সংকটে থাকা এসব যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়ায় ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক-পিকআপে চলাচল করছে।
সোমবার (৮ এপ্রিল) বেলা ২টায় গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভবানীপুর এলাকায় ময়মনসিংহগামী ১৪-১৫টি খোলা ট্রাক, ৭-৮টি পিকআপ ঈদ যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ট্রাকে উঠতে ব্যবহার করা হয়েছে বসার টুল। জনি নামের ট্রাকের এক সহকারী ময়মনসিংহের ফুলপুরের যাত্রী ডাকছেন। জনি বলেন, পুরো বছরই তার ট্রাক ভবন নির্মাণে ব্যবহার্য বালু গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পরিবহন করেন। ঈদের ছুটিতে বালুর কোনো অর্ডার না থাকায় মালিক ও চালক যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত নেন। একই কথা বলেন অপর সহকারী আশরাফুল। তিনি বলেন, ঈদের ২-৪ দিন আগে আমাদের আয় উপার্জন বন্ধ থাকে। ঈদের যাত্রীবহন করলে আয় হয়, ঈদ স্বাচ্ছন্দ্যে করা যায়।
বিজ্ঞাপন
সহকারী জনি বলেন, ভবানীপুর থেকে ময়মনসিংহের ফুলপুর পর্যন্ত আমরা জনপ্রতি যাত্রী ৪৫০ টাকা ভাড়া চাচ্ছি। এর মধ্যে ৪০০ টাকায় রাজি হলেই যাত্রী তুলছি। দিন শেষে হয়ত একটি ট্রিপ দেওয়া যাবে।
বিজ্ঞাপন
গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকা থেকে ময়মনসিংহের যাত্রী ৩৫০ টাকায় নিচ্ছেন পিকআপ চালক আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ঈদের আগে অনেক কারখানা থাকে বন্ধ, আমাদের কোনো কাজ থাকে না। মহাসড়কে অনেক যাত্রী গাড়ি পাচ্ছেন না। তাই যাত্রী পরিবহন করছি। এতে আমাদের বাড়তি আয় হচ্ছে অন্যদিকে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষেরও উপকার হচ্ছে।
পরিবার নিয়ে বাঘের বাজার এলাকায় নেত্রকোণা যেতে বাসের জন্য অপক্ষো করছেন মাহবুর রহমান। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে যে বাসগুলোই ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে আসছে সবগুলো বাসই যাত্রীতে পরিপূর্ণ থাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে উঠতে পারছি না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও বাস না পেয়ে বাধ্য হয়েই পিকআপ যোগে ময়মনসিংহের বাইপাস পর্যন্ত জনপ্রতি ১৫০ টাকায় রওনা দিয়েছি।
অপর যাত্রী শাহরিয়ার বলেন, বাসের সংকট রয়েছে, তাছাড়া বাসের ভাড়াও বেশি নিচ্ছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে বাস না পেয়ে খোলা ট্রাকে ২০০ টাকা ভাড়ায় রওনা দিয়েছি। এতে ঝুঁকি থাকলেও বাধ্য হয়েই চলাচল করতে হচ্ছে।
ভবানীপুর থেকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে যাচ্ছেন গার্মেন্টস কর্মী শাহজাহান আহমেদ। তিনি বলেন, বাসে ময়মনসিংহ সেতু পর্যন্ত ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে। অপরদিকে একই জায়গা থেকে ট্রাক-পিকআপে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। ঝুঁকি থাকলেও বাসের চাইতে সহজেই ট্রাক-পিকআপ পাওয়া যাচ্ছে, ভাড়াও তুলনামুলক কম। তাই অনেকেই ট্রাকে-পিকআপে যাতায়াত করছে।
মাওনা হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মাহবুব মোরশেদ জানান, ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের যাত্রা স্বাচ্ছন্দ্যেময় করতে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে। এখন পর্যন্ত মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে। দুপুর থেকে সড়কে যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। এখনো অতিরিক্ত ভাড়ার অভিযোগ পাইনি। কেউ যদি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সকল যাত্রীকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করতে নিষেধ করা হচ্ছে, তবুও কেউ চলাচল করলে তাদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
শিহাব খান/এএএ