ঈদ কিংবা বিশেষ উৎসব ঘিরে সব কর্মব্যস্ততা ছেড়ে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে নীড়ে ফেরা যেন বাঙালি সংস্কৃতির চিরাচরিত ঐতিহ্য। তবুও পেশাদারিত্ব ও দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে কিছু মানুষের বাড়ি ফেরা হয় না। তেমনই গল্প রয়েছে সড়কের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নিরলসভাবে কাজ করা ট্রাফিক পুলিশের। ঈদ এলে তাদের বাড়ি ফেরা নয়, বরং বাড়তি দায়িত্ব পালনেই খুঁজে নেন ঈদ আনন্দ। 

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) রাতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে ফেনী শহরে ট্রাংক রোডে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বললে একই সুরে কথা বলেন তারা।

শহরের খেজুর চত্বরে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল নাজির হোসেন বলেন, ট্রাফিক পুলিশে চাকরি নিয়ে গত পঁচিশ বছরে ২ থেকে ৩ বারও পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারিনি। তিন মেয়েকে নিয়ে আমার স্ত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। ঈদে ছুটি না পাওয়ায় সন্তানদের ঈদের কেনাকাটা থেকে শুরু করে সবকিছু তাদের মাকে করতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সবসময় ঝড়-বৃষ্টি বা সকল প্রতিকূল পরিবেশেও আমাদের সড়কে কাজ করতে হয়। সাধারণ মানুষজন যখন উৎসব পালনে পরিবারের কাছে ফিরে তখন আমাদের আরও বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয়। শুরুর দিকে এসব মেনে নিতে কষ্ট হলেও এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। 

জাহাঙ্গীর নামে আরেক পুলিশ কনস্টেবল বলেন, পরিবার থেকে দূরে থাকা কষ্টকর। তবে দেশ ও দেশের মানুষের সেবা করতে পারছি এটি ভালো লাগার। গত দুই বছরে চারটি ঈদ এভাবেই যাচ্ছে। ঈদে সবার আনন্দ থাকলেও, আমাদের কোনো আনন্দ নেই। আমাদের কাছে ঈদের দিন অন্যদিনগুলোর মতোই কাটে। 

ফেনী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনের সড়কে দায়িত্বরত সার্জেন্ট আবদুল জলিলের কাছে ঈদ অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত পাঁচ বছর বাড়িতে ঈদ করতে পারিনি। ঈদের দিনেও মানুষের জান-মালের নিরাপত্তায় রাস্তায় থাকতে হয়। দায়িত্ব আর মানুষের নিরাপদ ঈদ আনন্দের কথা ভেবে এ কষ্টকে হাসিমুখে মেনে নিয়েছি।

শহরের মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য শফিকুর রহমান বলেন, ঈদের দিন সহকর্মীরা সবাই মিলে একসঙ্গে নামাজ পড়ে ডিউটিতে চলে আসছি। প্রতিদিনের মতো দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত সময় পার করছি। কেউ কেউ পরিবারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এটাই আমাদের ঈদ আনন্দ।

আবদুল গাফফার নামে আরেক পুলিশ সদস্য বলেন, সবাই ঈদে ছুটি নিয়ে বাড়ি যেতে চায়। কিন্তু অনেকে পায় না। আগের দুই ঈদের মতো সড়কেই ঈদ কাটাচ্ছি। পরিবার-পরিজন ছাড়া ঈদ কষ্টকর। তবুও মানিয়ে নিচ্ছি। 

এ ব্যাপারে ফেনী ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ আনোয়ারুল আজিম মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে। রাষ্ট্র ও জনগণের প্রয়োজনে যেকোনো মুহূর্তে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হয়। মানুষ যেন নির্বিঘ্নে ঈদ আনন্দ শেষ করে আবার গন্তব্যে ফিরে যেতে পারে সেজন্য আমরা কাজ করছি। আর এটিই আমাদের ঈদ আনন্দ। 

তিনি বলেন, ফেনী শহর ট্রাফিক বিভাগে ৬১ জন পুলিশ সদস্য রয়েছে। এরমধ্যে এবার ঈদে ছুটি পেয়েছেন ১৪ জন। বাকিরা সবাই ঈদের দিনেও ডিউটি করছে। ঈদের দিন পুলিশ সুপার আমাদের সঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন। পরে পুলিশ লাইনে দুপুরে সবার জন্য উন্নত মানের খাবার ব্যবস্থা করা হয়। সবাই নিজেদের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি।

তারেক চৌধুরী/এএএ