জামালপুরে মাদকসেবীদের কাছে ট্যাপেন্টাডল নামের একটি ওষুধের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। এ জেলায় মাদক হিসেবে বেশ জনপ্রিয় এই ওষুধটি।

ট্যাপেন্টাডল তীব্র ব্যথানাশক একটি ওষুধ। কয়েক বছর আগে দেশের কয়েকটি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এটিকে বাজারজাত করত। তবে ট্যাপেন্টাডল মাদক হিসেবে ব্যবহার হাওয়ায় পরে এটি নিষিদ্ধ করা হয়। ২০২০ সালে এটিকে ‘খ’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। এরপর থেকে দেশে উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে।  

সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ওষুধ প্রশাসন বলছে, ট্যাপেন্টাডল বাংলাদেশে উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হলেও ভারতে এটি বৈধ। কালোবাজারের মাধ্যমে ভারত থেকে এটি সরবরাহ করছে কিছু অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীরা। তাদের কাছে থেকে বিভিন্নভাবে গোপনে মাদকসেবীরা ট্যাপেন্টাডল কিনে নিচ্ছেন। মাদকসেবীদের কাছে উচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে এই ট্যাপেন্টাডল।

গত ২৫ মার্চ রাত ৮টার দিকে জামালপুর জেলা শহরের কলেজ রোড়ে শফিমিয়ার বাজারে আল-আমিন মেডিকেল হলের মালিক আল-আমিন এক নারীর কাছে ৫০০ পিস ট্যাপেন্টাডল বিক্রির সময় জামালপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আটক করে। পরে তার বিরুদ্ধে মাদক মামলা দিয়ে কারাগার পাঠানো হয়। অবৈধ ওষুধ বিক্রির দায়ে বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি দোকানটি বন্ধ করে দেয়। এছাড়া এপ্রিল মাসে জামালপুর সদর উপজেলায় ডিবি পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে আরও তিনজনকে ট্যাপেন্টাডলসহ আটক করে।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা ও ঢাকা থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে জামালপুরে ট্যাপেন্টাডল আসে। কুরিয়ার সার্ভিস থেকে ওষুধের দোকানের কর্মচারীরা সংগ্রহ করে তাদের বাড়িতে রেখে দেন। 

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের জামালপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর জেলায় ২ হাজার ১৮০টি অনুমোদিত ওষুধের দোকান আছে। এর মধ্যেই জামালপুর সদর উপজেলায় প্রায় ৯শ অনুমোদিত ওষুধের দোকান রয়েছে। তবে উপজেলা পর্যায়ে অনুমোদিত ওষুধের দোকান কম রয়েছে। এছাড়া জেলা শহর ছাড়া উপজেলার ওষুধের দোকানে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। জেলায় অনুমতি ছাড়া কতগুলো ওষুধের দোকান রয়েছে এ তথ্য পাওয়া যায়নি ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের জামালপুর কার্যালয় থেকে। তবে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ওষুধের দোকান রয়েছে বলে জানান।

জামালপুর সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, জামালপুরে শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে সন্ধ্যা হলেই বসে মাদক সেবনের আড্ডা। ট্যাপেন্টাডল তীব্র ব্যথানাশক একটি ওষুধ, এটি এখন ইয়াবার বিকল্প হিসেবে মাদক সেবনকারীরা সেবন করছেন। শহরের গেটইপার এলাকার কিছু ফার্মেসি থেকে এসব ওষুধ কিনে পাওয়া যাচ্ছে। গোয়েন্দা নজরদারি বা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দুর্বলতায় মাদকের ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। জামালপুরে মাদক প্রবেশের রোড শনাক্ত করে পুলিশ প্রশাসনসহ যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জামালপুর কার্যালয়ের উপপরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট ইয়াবা ও হিরোইনের বিকল্প হিসেবে মাদক সেবনকারীরা সেবন করে থাকে। তাদের ধরতে আমাদের অভিযান নিয়মিত চলছে।

ওষুধ প্রশাসনের জামালপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রেহান হাসান বলেন, ট্যাপেন্টাডল তীব্র ব্যথানাশক ওষুধ। দেশে ট্যাপেন্টাডল অবৈধ ওষুধ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আমরা নিয়মিত ওষুধের দোকান ফার্মেসিগুলোতে পরিদর্শন করেছি এবং আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডিবি) কাজী শাহ নেওয়াজ বলেন, মাদকাসক্তরা নেশাদ্রব্য ইয়াবার বিকল্প হিসেবে ট্যাপেন্টাডল ওষুধ সেবন করছে। জামালপুরে ব্যাপক হারে ট্যাপেন্টাডল ওষুধ সেবন বেড়ে গেছে। অন্য জেলার তুলনায় জামালপুরে ট্যাপেন্টাডল ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। ট্যাপেন্টাডল মাদকসেবীদের কাছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ট্যাপেন্টাডল মাদক ব্যবসায় সঙ্গে বেশিরভাগ ওষুধ ব্যবসায়ীরা জড়িত। এ মাসে এপ্রিলে ট্যাপেন্টাডলসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের অভিযান নিয়মিত চলছে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো ছাড় নেই।

জামালপুরের সিভিল সার্জন ডা. ফজলুল হক বলেন, ট্যাপেন্টাডলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেউ যদি অবৈধ ওষুধ বিক্রি করে তাহলে ড্রাগ সুপারের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলব।

রকিব হাসান নয়ন/আরকে