তরমুজের খেত

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজের চাষ হচ্ছে না। চলতি বছরে প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে তরমুজ চাষের পরিমাণ। কৃষক ও কৃষি বিভাগ বলছে, ন্যায্যমূল্য না পেয়ে তরমুজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন জেলার চাষিরা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা ও শিবগঞ্জের পদ্মা-মহানন্দা নদী ও নদী তীরবর্তী এলাকায় কয়েক বছর আগেও বিপুল পরিমাণ জমিতে তরমুজ চাষাবাদ করা হতো। সদর উপজেলার ইসলামপুর, চরবাগডাঙ্গা, শিবগঞ্জের পাঁকা, ঘোড়াপাখিয়া, উজিরপুর ও গোমস্তাপুর উপজেলার নয়াদিয়াড়ী এলাকায় ব্যাপক হারে চাষ হতো তরমুজের। তবে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ চাষিরা বন্ধ করে দিয়েছেন তরমুজ চাষ। 

টানা ১০ বছর মহানন্দা নদীর পাড়ে তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক মো. আব্দুল মান্নান। জেলা সদরের চরমোহনপুর মহানন্দা তীরবর্তী এলাকায় তিনি তরমুজ চাষাবাদ করতেন। গত ৮ বছর ধরে তরমুজ চাষ করছেন না। কেন হঠাৎ তরমুজ চাষ বন্ধ করলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে আব্দুল মান্নান বলেন, মহানন্দা নদীর পানি শুকিয়ে গেলে প্রতি বছর তরমুজের চাষাবাদ করতাম। কিন্তু তরমুজ চাষ করে কোন বছরই তেমন লাভ করতে পারতাম না। সেচ, সার দিতে যা খরচ হতো, তাও উঠতো না। পানির দামে বিক্রি করতে হতো। সর্বশেষ বছরে ৫ বিঘা তরমুজ চাষ করে লাভ তো দূরের কথা প্রায় ৬-৭ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, বালু মাটিতে প্রতি বছর বাম্পার ফলন হলেও বারবার লোকসান হওয়ায় পরিবারের অনুরোধে তরমুজ চাষ বন্ধ করে দিই। সে জায়গায় এখন ধান, গম চাষ করি। এসব ফসলের দাম ভালো। তাই তরমুজের কথা আর মাথায় আসে না। 

গত ৬-৭ বছর আগেও সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের নতুন ইসলামপুর, আহলদীপারা, ক্লাব হাট, কলাবাগান, কাজীপাড়া, গাজীপাড়া এলাকায় মহানন্দা নদীর ধারে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে তরমুজের চাষাবাদ হতো। এ বছরও দু-এক জায়গায় সামান্য পরিমাণে হয়েছে। 

এই এলাকার এক তরমুজ চাষি আবুল খায়ের জানান, এখন ভয়ে কেউ আর তরমুজ চাষ করে না। মাঠে তরমুজের তেমন চাষাবাদ হয় না। তারপরও অনেক ঝুঁকি নিয়ে চাষ করলে জমি থেকেই তুলে খেয়ে নেয়। 

শিবগঞ্জের এক তরমুজ চাষি বলেন, ৫ বছর আগেও পদ্মার চরে অনেক তরমুজ চাষ হয়েছে। কিন্তু কৃষকরা তরমুজ চাষে ঠকতে ঠকতে তা ছেড়ে দিয়েছে। তরমুজ চাষ করে নূন্যতম খরচটাও উঠতো না। এখন এসব জমিতে মালটা, বরই, পেয়ারার বাগান গড়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও ধান, ভুট্টা, গম, পটলের চাষাবাদ হচ্ছে।

সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের চাঁপাই-মহেশপুর গ্রামের একজন ভ্রাম্যমাণ ফল বিক্রেতা মো. কাবিল জানান, ৫-৭ বছর আগে ভ্যানে করে কতো তরমুজ বিক্রি করেছি। আশপাশের জমি থেকে কয়েক টাকা পিস হিসেবে এনে বিক্রি করতেও হিমশিম খেতে হয়েছে। দাম না পেয়ে কৃষকরা তরমুজ চাষ বন্ধ করে দিয়েছে। আর এখন দেখুন, কতো দাম তরমুজের! হয়তো চাষিরা এখনও তাদের প্রাপ্য দাম পায় না। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। 

জেলা শহরের এক আড়তদার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত দুই দশক ধরে তরমুজের ব্যবসা করি। ৭-৮ বছর আগেও জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে তরমুজ বিক্রি করেছি। কিন্তু গত ৪-৫ বছর থেকে জেলায় চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন বাইরের বিভিন্ন জেলার ওপর নির্ভর করতে হয়। স্থানীয়ভাবে দামেও এর প্রভাব পড়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলায় তরমুজ চাষাবাদের পরিমাণ নিয়ে কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে বর্তমানে এই জেলায় তরমুজ চাষ করা হয় না বললেই চলে। জেলায় হাতেগোনা কয়েক জায়গায় চাষ করা হলেও সেটা খুবই কম। গত ৫ বছরে দাম না পেয়ে তরমুজ চাষ কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। 

জাহাঙ্গীর আলম/এসপি