ক্যান্সার আক্রান্ত রবিউলের পাশে উপজেলা চেয়ারম্যান
পাবনার সুজানগরে ক্যান্সার আক্রান্ত হতদরিদ্র পরিবারের কিশোর রবিউলের (১৪) চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করেছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান শাহীন। শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে ওই কিশোরের পরিবারকে ডেকে তিনি আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।
গত মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) ‘এক লাখ টাকা বাঁচাতে পারে ক্যান্সার আক্রান্ত কিশোর রবিউলকে’ শিরোনামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকাপোস্ট.কমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীনের নজরে আসলে তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত কিশোর রবিউলের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। শুক্রবার তার চিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগত তহবিল থেকে তিনি নগদ ২০ হাজার টাকা প্রদান করেন।
বিজ্ঞাপন
সুজানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত সংবাদ দেখে এই অসহায় ক্যান্সার আক্রান্ত ছেলেটি সম্পর্কে জানতে পেরে তার পরিবারকে কিছু অর্থ সহযোগিতা করেছি।
তিনি বলেন, এই উপজেলার হতদরিদ্রদের জন্য আমার দরজা সব সময় খোলা। চাইলে যে কেউ নক দিতে পারে। আমাদের সবার উচিত যার যার স্থান থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য একটি ফান্ড তৈরি করে রাখা। যাতে তাদের বিপদে সহযোগিতা করা যায়।
বিজ্ঞাপন
এদিকে রবিউলের চিকিৎসার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় তার পরিবারের সদস্যরা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। রবিউলের মা মোছা. চায়না খাতুন বলেন, আজকে দুঃসময়ে আমার রবিউলের পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় কথা আজীবন মনে রাখব।
রবিউলের বাবা আব্দুর রশিদ শেখ বলেন, দিনমজুর হিসেবে অন্যের বাড়িতে কাজ করে প্রতিদিন যে ৩৫০-৪০০ টাকা রোজগার করি সেই টাকা দিয়ে পরিবারের পাঁচজন সদস্যের মুখে আহার তুলে দেওয়াসহ সংসারের অন্যান্য খরচ করে কোনো মতে জীবন চলে। নিজের এই সামান্য আয়ের টাকা দিয়ে ছেলেটিকে চিকিৎসা করিয়ে বাঁচাতে পারব না। চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের পাশে থেকে বড় উপকার করলেন।
উল্লেখ্য, রবিউল সুজানগর উপজেলার ভাঁয়না ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর আব্দুর রশিদ শেখ ও চায়না খাতুনের ছেলে রবিউল। গত প্রায় আট মাস আগে রবিউল হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে সিরাজগঞ্জ খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যান বাবা আব্দুর রশিদ।
পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসোতালে ভর্তি করে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর পর রবিউলের শরীরে দুরারোগ্য ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- রবিউল ক্যান্সারের এক নম্বর স্টেজে আছে যা চিকিৎসা করালে নিরাময়যোগ্য। হতদরিদ্র দিনমজুর বাবা আব্দুর রশিদ গত প্রায় আট মাস ধরে ছেলের চিকিৎসার খরচ যোগাতে সর্বস্বান্ত। রবিউলের শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ায় আশা এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে ২০ হাজার টাকা এবং স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি এলাকার মানুষ হাট-বাজার থেকে কিছু টাকা সংগ্রহ করে দিলে সেই টাকা দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু করে তার পরিবার।
প্রতি মাসে দুইবার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রবিউলকে নিয়ে যেতে হয়। এখন পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ টাকা তার চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হয়েছে। প্রতি মাসে দুটি করে সর্বমোট ১০টি কেমোথেরাপি দিতে বলেছেন চিকিৎসক। এর মধ্যে আটি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কেমোথেরাপি দিতে ২০ হাজার করে টাকা লাগছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন- সব মিলে আরও প্রায় ৮০ হাজার টাকা লাগবে।
রাকিব হাসনাত/আরএআর