ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের ছোটভাই মামুনুর রশিদ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

বুধবার (২৯ মে) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৯২ হাজার ৫২১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হন মামুন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টারের স্ত্রী শাহিদা আক্তার ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৪৮০ ভোট। রোশন আলী মাস্টারের মেয়ে খাদিজা বিনতে রোশন দোয়াত কলম প্রতীকে ৩০৩ ভোট পেয়ে শুধু তৃতীয়ই হননি, হারিয়েছেন জামানতও।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের বরাত দিয়ে জানা গেছে, বুধবারের নির্বাচনে দেবিদ্বার উপজেলা থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন তিন প্রার্থী। তারা হলেন, দেবিদ্বার আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের ছোটভাই মামুনুর রশিদ আনারস প্রতীকে, কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টারের স্ত্রী শাহিদা আক্তার ঘোড়া প্রতীকে এবং রোশন আলী মাস্টারের মেয়ে খাদিজা বিনতে রোশন দোয়াত কলম প্রতীকে 

স্থানীয়রা জানান, এই নির্বাচনকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার। সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের ছোটভাই মামুনুর রশিদকে ঠেকাতে স্ত্রী ও মেয়েকে প্রার্থী করিয়েছিলেন রোশন আলী। তাদের উভয়কে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন দেবিদ্বার আসনের সাবেক দুইবারের সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। হয়েছিলেন খাদিজা বিনতে রোশনের দোয়াত কলম প্রতীকের এজেন্টও।

কিন্তু তাতেও আটকানো যায়নি মামুনকে। রোশন আলীর স্ত্রী শাহিদা আক্তার ৩৪ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হলেও গো হারা হেরেছেন মেয়ে খাদিজা বিনতে রোশন। মাত্র ৩০৩ ভোট পেয়ে খুঁইয়েছেন জামানতও।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, রাজনৈতিক অন্তঃকোন্দলের কারণেই সাবেক সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের ইন্ধনে স্ত্রী শাহিদা আক্তার ও মেয়ে খাদিজা বিনতে রোশনকে প্রার্থী করেন রোশন আলী মাস্টার। বুধবার নির্বাচনের দিন দুপুরেই কেন্দ্র দখল, জালভোট এবং হামলার অভিযোগ তুলে রোশন আলী মাস্টারের স্ত্রী শাহিদা আক্তার ও মেয়ে খাদিজা বিনতে রোশন দুজনই নির্বাচন বর্জন করেন। ফলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের ছোটভাই মামুনুর রশিদ।

এ বিষয়ে জানতে রোশন আলী মাস্টার, তার স্ত্রী শাহিদা আক্তার এবং মেয়ে খাদিজা বিনতে রোশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া না দেওয়ায় কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী মামুনুর রশিদ মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল আমাকে পরাজিত করতে রোশন আলী মাস্টারের স্ত্রী ও মেয়েকে প্রার্থী করিয়েছিলেন। তিনি (এমপি রাজী) দোয়াত কলম প্রতীকের প্রধান এজেন্ট হয়ে উপজেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। অনেক চেষ্টা করেও খাদিজা বিনতে রোশনের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেননি সাবেক সংসদ সদস্য রাজী ফখরুল। দোয়াত কলম মার্কায় ভোট পড়েছে মাত্র ৩০৩টি।

আমাকে ফেল করানোর জন্য তিনি প্রকাশ্যে কাজ করেছেন। আমার নেতাকর্মীদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। এ বিষয়ে আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছিলাম কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সেসব ঘৃণিত কাজের জবাব দেবিদ্বারের মানুষ ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দিয়েছেন।

কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত দেবিদ্বারের আপামর জনতা। আমাদের পরিবার বঞ্চিত দেবিদ্বার উপজেলার মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর। দেবিদ্বারের মানুষ আমাদেরকে বিশ্বাস করে যে দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন, আমরা কখনও এ উপজেলার মানুষকে বঞ্চিত করবো না।

আরিফ আজগর/এমএএস