বরগুনায় ১৭৪ হেক্টর পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত, দিশাহারা চাষি
বরগুনা সদর উপজেলার দক্ষিন হেউলিবুনিয়া এলাকার পান চাষি মো. টিপু সুলতান। তিনি এবার তিনটি পানের বরজ করেন। স্বপ্ন দেখছিলেন লাভের। তবে ঘূর্ণিঝড় রেমালে তার তিনটি পানের বরজের দুটিই ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। শুধু টিপু সুলতানই নয় তার মতো আর শতশত চাষির পানের বরজ ঘূর্ণিঝড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
পান চাষি টিপু সুলতান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এলাকায় অসংখ্য পানের বরজের ক্ষতি হয়েছে। আমার তিনটি বরজের মধ্যে দুটিই মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। আমি ব্যাংক থেকে ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পানের বরজ করেছি। এখন এ ঋণ কীভাবে পরিশোধ করব বুঝতে পারছি না।
বিজ্ঞাপন
একই এলাকার পান চাষি বাদল হাওলাদারের একটি পানের বরজ ভেঙে প্রায় চার লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল তিনদিন পর্যন্ত চলছে। প্রথমদিন বাড়িতেই ছিলাম। পরে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়লে আমরা সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেই। বাতাসের তীব্রতা বেশি থাকায় পানের বরজ ভেঙে গেছে। এতে যে ক্ষতি হয়েছে তা আমার পক্ষে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। কেউ যদি আমাদেরকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে তাহলে আবারও আমি পানের বরজ দাঁড় করতে পারব।
ঝড়ে গাছ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মিনারা বেগমের পানের বরজ। তিনি বলেন, আমার একটি বরজে ঝড়ো হওয়ায় পাঁচ থেকে ছয়টি গাছ পড়েছে। এতে পানের বরজটি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। বরজ থেকে আয়ের টাকা দিয়েই আমার সংসার চলে। আমার বিকল্প কোনো আয়ের উৎস নেই।
বিজ্ঞাপন
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর বরগুনার বিভিন্ন এলাকায় পান চাষ হয়েছে ৩৬৮ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮৪ হেক্টর জমির পানের বরজ। এতে পান উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে ৭৩৬ টন, যার আর্থিক ক্ষতি প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা। এতে বরগুনার প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে অন্যান্য ফসলের মধ্যে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি ১ হাজার ৭৯৬ হেক্টর, আউশ বীজতলা ১ হাজার ৭৬ হেক্টর, রোপা আউশ ১৩ হাজার ৬৬ হেক্টর, মরিচ ২৬৫ হেক্টর, হলুদ ২৬ হেক্টর, কলা ৩৫ হেক্টর, পেঁপে সাড়ে ৩৩ হেক্টর ও আমবাগান ৭ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে জেলায় প্রায় ১৭৫ কোটি টাকার ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বরগুনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরগুনায় প্রায় ৪০০ হেক্টরের অধিক জমিতে পানের চাষ হয়। জেলায় পান চাষির সংখ্যা প্রায় ৪ হাজারের ওপরে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে এসব পান চাষি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে আমাদের দপ্তরে পান নিয়ে কোনো প্রকল্প না থাকায় চাষিদের সরাসরি সহযোগিতা করার সুযোগ কম।
মো. আব্দুল আলীম/এএএ