গাজীপুরের টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনের ছাদে চড়ে গন্তব্যহীন যাত্রা করছিল ১২ বছরের পথশিশু সাকিব। পথিমধ্যে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় এসে কোনো তারে বাড়ি খেয়ে ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয় শিশুটি। এরপর স্থানীয়রা ৯৯৯- এ কল দিলে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে সে সুস্থ হয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানা পুলিশের নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ডেস্কের হেফাজতে আছে।

শনিবার (১ জুন) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা পোস্টকে এমনটাই জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম। এর আগে গত বুধবার (২৯ মে) সকালে শিশুটিকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। 

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, ১২ বছরের শিশু মো. সাকিব বরিশালের মালেক-রুখসানা নামের এক দম্পতির ছেলে। বাবা বরিশালেই থাকেন এবং মায়ের পাতারহাট এলাকায় বিয়ে হয়েছে। সাকিব টঙ্গী রেলস্টেশন এলাকার ভাসমান পথশিশু। সে ট্রেনের ছাদে চড়ে টঙ্গী থেকে গন্তব্যহীন ট্রেনযাত্রার পথে উল্লাপাড়া এলাকায় কোনো তারের সঙ্গে বাড়ি খেয়ে আহত হয়ে নিচে পড়ে যায় এবং অজ্ঞান অবস্থায় রেল লাইনের পাশে পড়ে থাকে। পরে স্থানীয়রা ৯৯৯- এ কল করলে উল্লাপাড়া ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। 

উল্লাপাড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ইনচার্জ মো. নুরুল ইসলাম বাবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্থানীয়রা তাকে ওই অবস্থায় দেখে ৯৯৯- এ কল দেয়। পরে আমরা গিয়ে তাকে স্টেশন এলাকা থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উল্লাপাড়া ৩০ শয্যা বিশিষ্ট (সদর) হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরবর্তীতে সেখানকার চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে মানবিক কারণে আমরা সবাই মিলে টাকা দিয়ে স্থানীয় একজন অ্যাম্বুলেন্স চালককে অনুরোধ করে অল্প টাকা ভাড়া দিয়ে শিশুটিকে সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। ছেলেটির শরীরের অনেক স্থানে ক্ষত ছিল। আমরা ধারণা করছি কোনো তারে বা ওভার ব্রিজের সঙ্গে বাড়ি খেয়ে সে ট্রেন থেকে নিচে পড়ে গিয়েছিল। 

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার রাকিবুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

সিরাজগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে আজকে ছাড়পত্র দিয়েছে। বর্তমানে তাকে সিরাজগঞ্জ সদর থানার নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ডেস্কের হেফাজতে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যেই টঙ্গী পূর্ব থানার মাধ্যমে শিশুটির খোঁজখবর নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ঠিকানা পাওয়া গেলে তাকে সেখানে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।

শিশুটির বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সে টঙ্গী স্টেশনে পথশিশু হিসেবে সেখানেই থাকে। সেখানকার জনৈক ভাঙারির দোকানদার তার দেখাশোনা করে। 

শুভ কুমার ঘোষ/আরএআর