৭০ বছর বয়সী কিয়ামত আলী দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে স্ত্রীকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। ব্যাটারিচালিত পাখিভ্যান চালিয়ে দুজনের সংসার চলছিল তাদের। এরইমধ্যে বাড়ির সামনে রাখা ভ্যানটি চুরি হয়ে গেছে কিয়ামত আলীর। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বৃদ্ধ দম্পতি। ভ্যান চুরি হওয়ার পর থেকে অনবরত কান্না করছেন তারা। 

বধির (কানে শোনেনা) বৃদ্ধ কিয়ামত আলী চুয়াডাঙ্গা শহরের রেলপাড়ার গ্রীনফুড মালিকের বাড়িতে বিনা ভাড়ায় বসবাস করে আসছেন। গতকাল শুক্রবার (৭ জুন) রেলপাড়ার বাড়ির সামনে থেকে তালা ভেঙে তার ভ্যানটি নিয়ে যায় চোর। ভ্যানটি হারিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে নিরুপায় হয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন তিনি।

শনিবার সকালে সদর থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি। সেখান থেকে উলটো জানানো হয় ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশকে দেওয়ার জন্য। পরে বিকেলে ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক ওসিকে বিষয়টি জানালে বিকেলেই বৃদ্ধকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়। এরপর ভ্যান হারানোর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।

বৃদ্ধ কিয়ামত আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আসহায়, আমার কোনো জমি-বাড়ি নেই। শহরের রেলপাড়ার নাসির উদ্দীন জোয়ার্দ্দারের বাড়িতে বিনা ভাড়ায় আজ ২৫ বছর ধরে বসবাস করছি স্ত্রীকে নিয়ে। শুক্রবার বাড়ির সামনে তালা ভেঙে ভ্যানটি কে বা কারা নিয়ে গেছে। আজ সকালে সদর থানায় গেলে সেখান থেকে জানানো হয় ঘটনাস্থলের সামনে জেলা কাস্টমস, একসাইজ ও ভ্যাট অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে বলা হয়। 

তিনি আরও বলেন, বৃদ্ধ বয়সে ভ্যান চালিয়েই কোনো রকম সংসার চলে। এখন কিভাবে চলব বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

কিয়ামত আলীর স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বয়সের ভারে প্যাডেলচালিত ভ্যান চালাতে না পারায় বছর পাঁচ আগে ধার করে ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি কেনা হয়। এরপর থেকে টেনেটুনে দুজনের সংসার চলে। নিজেদের কোনো কিছুই নেই। অন্যের বাড়িতে থাকি। ভ্যানটি চুরি হওয়ায় না খেয়ে থাকতে হবে। কেউ যদি একটা ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে নুন-ভাত খেয়ে আমরা চলতে পারবো। 

চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) শেখ সেকেন্দার আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, উনি (বৃদ্ধ) কার কাছে এসেছিলেন আমি জানি না। উনার সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। আমি অসুস্থ। আমার নম্বর দিয়ে উনাকে আবার পাঠিয়ে দিন। আমি বিষয়টি দেখব।

এরপরই সদর থানা পুলিশের ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইয়াসিন আরাফাত প্রতিবেদকের কাছে কল করে বলেন, সকালে বৃদ্ধ থানাতে যে সময় এসেছিলেন সেই সময় আমি ছিলাম না। অন্য কেউ ছিল হয়তো। পরে প্রতিবেদকের মাধ্যমে বিকেলে থানায় গিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বৃদ্ধ কিয়ামত আলী।

আফজাল/এমএএস