পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে পিরোজপুরের পশুর হাটগুলো জমতে শুরু করেছে। তবে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা ও দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ বিক্রেতাদের। হাট ভর্তি লোক থাকলেও নেই ক্রেতা। দাম করে চলে যাচ্ছেন অনেকে।

এতদিন ধরে কষ্ট করে বড় করা কোরবানির পশুটি কম দামে বিক্রি করে লোকসান গুনতে হচ্ছে অনেক খামারিকে। গতকাল মঙ্গলবার (১১ জুন) পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার দীঘিরজান স্থায়ী পশুর হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দীঘিরজান হাটে দেখা যায়, পিরোজপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারী ও খামারিরা। কোরবানির গরুতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে পুরো পশুর হাট। ছোট বড় সব ধরনের কোরবানির পশুর পশরা সাজিয়ে ক্রেতাদের অপেক্ষায় বসে আছেন বিক্রেতারা। তবে ক্রেতা মিলছে না। বিশেষ করে আশেপাশের জেলা থেকে ব্যাপারীরা ট্রাক, নসিমনে করে একসঙ্গে ৫ থেকে ১০টি বা তার অধিক গরু নিয়ে এসেছেন। হাটের অবস্থা এমন থাকলে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।

বিক্রেতারা বলছেন, পশু বেশি আসলেও হাটে ক্রেতার বেশ সংকট। অতিরিক্ত গরম এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘুর্ণিঝড় রেমালের কারণে এমনটা হতে পারে। পশু দেখে অনেক কম দাম বলে চলে যাচ্ছেন ক্রেতারা। তাদের গরু কেনার আগ্রহ কম। বিক্রি না হলে অন্য হাটে বা খামারে ফেরত নিয়ে যেতে হবে। ফলে পরিবহন খরচও বেড়ে যাবে।

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার ব্যাপারি কেরাত আলী বলেন, তিনি এ বছর কোরবানির জন্য ৬০টি গরু কিনেছেন। এই হাটে ১০টি গরু নিয়ে এসেছেন। এ হাটে ক্রেতা অনেক কম। ক্রেতারা আমার প্রত্যেকটা গরুর দাম ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা কম বলছেন। এখনো গরু বিক্রি করতে পারিনি। এ দামে বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে।

স্থানীয় মাটিভাঙ্গা গ্রাম থেকে এসেছেন খামারি বেলায়েত হোসেন, চারটি গরু নিয়ে এসেছি তবে কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছি না। যে দাম বলে তাতে গরু দিয়ে দিলে লস হবে। এই হাটে গরু বেশি, কিন্তু ক্রেতা কম। সবাই দেখতে এসেছে।

পিরোজপুর থেকে কোরবানির পশু কিনতে এসেছেন মেহেদি পিয়াল। তিনি বলেন, নাজিরপুরের দীঘিরজান হাটে গরু কেনার জন্য এসেছি। হাটে প্রচুর গরু উঠেছে। ছোট বড় সবধরনের গরু আছে তবে দাম কিছুটা বেশি। একটি গরু পছন্দ হয়েছে দাম দরে মিললে কিনে ফেলব।

হাটের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নাজিরপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস আই) মো. সোলায়মান বলেন, হাটের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এখানে আমার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আছে এবং গ্রাম পুলিশ সদস্যরা আছে জাল টাকা চেক করার মেশিন আছে। আশা করি আমরা এখানে সুষ্ঠুভাবে নিরাপত্তা প্রদান করতে পারব। যদি কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে আমাদের কাছে জানালে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

নাজিরপুর দীঘিরজান হাটের ইজারাদার লোকমান হাকিম হিরু বলেন, দীঘিরজান গরুর হাট শতবর্ষ পুরনো একটি হাট। এখানে প্রতি শনিবার এবং মঙ্গলবার হাট বসে। আমার জানা মতে পিরোজপুর জেলার সবচেয়ে বড় গরুর হাট এটি এখানে এ বছর প্রচুর পরিমাণ গরুর আমদানি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে সম্প্রীতি ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব এবং অতিরিক্ত গরমের কারণে ক্রেতা সমাগম কিছুটা কম। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কোরবানির পশুর দাম কম। পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা টহল রয়েছে। আশা করি আস্তে আস্তে ক্রেতাদের সংখ্যা বাড়বে।

শাফিউল মিল্লাত/আরকে