অনলাইনে ৫০০ টাকা কেজি দরে মিলছে কোরবানির গরু
বর্তমানে অনলাইনে পণ্য বেচাকেনার সঙ্গে সবাই কমবেশি পরিচিত। তবে শুধু পণ্য নয় অনলাইনে এবার পাওয়া যাচ্ছে কোরবানির গরুও। ৫০০ টাকা কেজি দরে অনলাইনে অর্ধেক অ্যাডভান্স দিয়ে হোম ডেলিভারিতে গরু পাঠানো হচ্ছে। নেওয়া হচ্ছে না কোনো ডেলিভারি চার্জ। যশোরের ঝিকরগাছার হাজিরবাগের মোমেনা অ্যাগ্রো ফার্মে এভাবেই অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে কোরবানির গরু।
মোমেনা অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক মো. হুমায়ূন কবির ২০২২ সালে অর্গানিক এ ফার্মটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার ফার্মে গরু ছাড়াও রয়েছে উন্নতজাতের ছাগল।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে মোমেনা অ্যাগ্রো ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, গরুর খামারের শেডের ভেতরে স্থাপন করা রয়েছে ডিজিটাল ওজন মেশিন। ক্রেতাকে তার পছন্দসই গরুকে সেই মেশিনে উঠিয়ে সরাসরি ওজন মেপে দেখান খামারি মো. হুমায়ূন কবির। এরপর দর অনুযায়ী সেই গরুকে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেন। সেক্ষেত্রে তিনি ক্রেতার নিকট থেকে কোনো ডেলিভারি চার্জ নেন না।
খামারি হুমায়ুন কবির জানান, অনলাইনে গরু বিক্রির জন্যে তিনি একটি ফেসবুক পেইজ খুলেছেন। সেখানে খামারে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা গরুর ছবি আপলোড এবং বুস্টিং করা হয়। সেখানে গরুর বয়স বিশেষ করে কয়টি দাঁত আছে সেগুলো উল্লেখ করা হয়। সেই পেইজ দেখে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর সরাসরি লাইভে গরুর ওজন দেখে দামদর অনুযায়ী সেগুলোর অর্ডার দেন অনলাইনের ক্রেতারা। ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হলেও বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে গত বছরের জুলাই থেকে। এ পর্যন্ত ২০টি গর বিক্রি করেছেন তিনি। যার মধ্যে ৯টি গরু অনলাইনে পছন্দ করেছেন ক্রেতারা। আর ক্রেতাদের সবাই ঢাকার বাসিন্দা। এরমধ্যে কয়েকজন তার পূর্বপরিচিত এবং কিছু নতুন কাস্টমার। ওজন হিসেবে যারা কেনেন, তাদের জন্যে প্রথমদিকে ছিল ৪৯০ টাকা কেজি, এখন ৫০০ টাকা করে। গত বছর প্রথম যে গরুটি বিক্রি করা হয়েছিল, সেটির ওজন ছিল ৩৭৫ কেজি।
বিজ্ঞাপন
অনলাইনে কিনতে হলে ক্রেতাকে দামের ৫০ শতাংশ প্রথমে পরিশোধ করতে হয়। সেক্ষেত্রে ফার্মের নামে একটি অ্যাকাউন্ট করা রয়েছে। আর বাকি ৫০ শতাংশ গরু নেওয়ার সময় পরিশোধ করতে হয়। পরিচিতদের কাছ থেকে গরু বিক্রির টাকা সরাসরিও তিনি নিয়েছেন। আর অনলাইনে যারা কেনেন, তাদের জন্যে ডেলিভারি চার্জ ফ্রি।
হুমায়ুন কবির বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এ বছর ১৭টি গরু বিক্রির পরিকল্পনা নিয়ে তা লালন-পালন করেছি। ইতোমধ্যে ১১টি বিক্রি হয়েছে, আর ৬টি বিক্রির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। অনলাইনে বিক্রির পাশাপাশি সরাসরিও গরু বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, এ বছর তিনি সর্বোচ্চ ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় গরু বিক্রি করেছি, সর্বনিম্ন বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার টাকায়। অন্য যেগুলো রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে।
মোমেনা অ্যাগ্রোতে দেশি, ক্রস, নেপালি গীর, শাহিওয়াল ও ফ্রিজিয়ান জাতের গরু রয়েছে। এ ছাড়া গরুর শেডের পাশে ভূমি থেকে একটু উঁচুতে বাঁশ, কাঠ ইত্যাদি দিয়ে শেড বানানো হয়েছে ছাগলের জন্যে। সেখানে থাকে দেশি, তোতাপুরী, যমুনাপুরী জাতের বাচ্চাসহ ১৭টি ছাগল। ছাগল কিছুদিন আগে তোলা হয়েছে। সেগুলো এখনও বিক্রি হয়নি।
খামারি হুমায়ূন কবির বলেন, আমি গরুগুলোকে যে-সব খাবার দেই সেগুলো বাইরে থেকে কেনা নয়। দানাদার খাবারের মধ্যে দেওয়া হয় ভুট্টা, ধানের কুড়া, বুটের খোসা, সয়াবিন খইল আর খুদ (ভাঙা চাল)। এ ছাড়া কাঁচা ঘাস আর খড়। যেহেতু প্রাকৃতিক খাবার দেওয়া হয়, সেকারণে এটি অর্গানিক বলছি। কোনো প্রসেস ফুড এখানে ব্যবহার করা হয় না।
তিনি বলেন, খড়ে যেহেতু কোনো পুষ্টিগুণ নেই। তবে গরুর পেট ভরাতে ও জাবর কাটার জন্যে এই খড় ব্যবহার হয়। আমি ইউএমএস (ইউরিয়া, মোলোসেস অ্যান্ড স্ট্র) প্রক্রিয়া করে গরুকে খাওয়ায়।
পশু চিকিৎসক আসাদুজ্জামান বলেন, ইস্তা গ্রামের হুমায়ূন সাহেব একজন সুশিক্ষিত খামারি। তিনি গরু-ছাগল পালন করেন সঠিক নিয়মে। খাবার-দাবার সবই প্রাকৃতিক। তিনি নিজেই ঘাস ও ভুট্টা উৎপাদন করেন। আমি নিয়মিতই তার খামারে আসি। গরুর পেটের পীড়া ছাড়া মোটা দাগে তেমন কোনো অসুখের চিকিৎসা করা হয়নি।
মো. হুমায়ূন কবির (৪০) ঢাকার একটি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করে ঢাকা মহানগর কলেজে চাকরি করতেন। চাকরির ৭ বছর পর গ্রামে ফেরেন। মাথার ভেতরে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। সেই চিন্তা থেকে রাজধানী থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। পশুপালনের পরে গ্রহণ করেন প্রশিক্ষণ। ভাইদের সহায়তায় গড়ে তোলেন নিজের মায়ের নামে এই ফার্মটি।
এ্যান্টনি দাস অপু/এএএ