পাঁচ হাজার পরিবারের সঙ্গে ক্রিকেটার বিথীর ঈদ আনন্দ
ভাত-মাংসের স্বাদে অসহায় মানুষের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে কোরবানির পশুর মাংস বিতরণ করছেন ক্রিকেটার আরিফা জাহান বিথী। অর্থনৈতিক সংকট ও অস্বচ্ছলতার কারণে অনেক মানুষই কোরবানি দিতে পারেননি। আবার অনেকই পরিবারের সাথে এক টুকরো মাংসের স্বাদ বিনিময়ের সামর্থ্যও রাখেন না। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো যাদের অবস্থা এমন পাঁচ হাজারের বেশি পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে গ্রামে গ্রামে ছুটছেন বিথী।
একঝাঁক স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব পরিবারে মাংস পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। অসহায়, দুস্থ, এতিম, নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষসহ ভাসমান কেউই বাদ যায়নি বিথীর ভালোবাসা থেকে। সোমবার (১৭ জুন) ঈদের দিন দুপুর থেকে রংপুরের বদরগঞ্জ ও আউলিয়াগঞ্জ এবং কুড়িগ্রামের বিভিন্ন নদীর চরে অসহায় পরিবারের মাঝে কোরবানির মাংস বিতরণ করছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
বিথীর সহায়তামূলক এ মানবিক কার্যক্রম মঙ্গলবার (১৮ জুন) পর্যন্ত চলবে। কয়েক বছর ধরে ক্রিকেটার বিথী এই কাজটি করে আসছেন। এ বছর বিভিন্নজনের সহযোগিতায় ৫টি গরু ও ৮টি খাসি কোরবানি করে মানবিক এ কাজ করেছেন আরিফা জাহান বিথী।
বিজ্ঞাপন
সোমবার সকালে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজের পর একে একে পাঁচটি গরু ও আটটি খাসি কোরবানি করা হয়। এরপর বিথীর সঙ্গী-সাথীদের নিরন্তন কষ্টে প্রস্তুত করা হয় কোরবানির পশুর মাংস বিতরণের প্যাকেট। দুপুর থেকে শুরু হয় বিতরণ কার্যক্রম। বিথী তার স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে নিয়ে রংপুর মহানগরীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার গিয়ে অসহায়-দুস্থ, কর্মহীন, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংসের প্যাকেট পৌঁছে দেন। মানবিক এই সহায়তার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বিথীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
ঈদের দিনেও অসহায় মানুষদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ক্রিকেটার আরিফা জাহান বিথী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদের দু’দিনে ৫টি গরু ও ৮টি খাসি কোরবানি করে বিভিন্ন এলাকার এতিম, অসহায়, দুস্থ ও নদীর চরে বসবাসকারী পরিবার এবং বৃদ্ধ মা-বাবাদের মাঝে বিতরণ করা হবে। এবার ৫ হাজারেরও বেশি মানুষের সাথে এই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা হবে। সবই আল্লাহর ইচ্ছে। যারা বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ।
সাবেক এই নারী ক্রিকেটার বলেন, আমি কোনো মানবিক ফেরিওয়ালা নই। আসল মানবিক ফেরিওয়ালা সেইসব মানুষ যারা আড়াল থেকে আমাকে সহযোগিতা করে এই কাজগুলো সহজ করে দিয়েছেন। সুতরাং এই প্রশংসা সম্পূর্ণ তাদের জন্য। তাদের পরিশ্রমের অর্থ দিয়ে আমাদের কাজগুলো সহজ হচ্ছে। যারা আড়ালে থাকে তাদের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।
শুধু ঈদ নয়, যেকোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বিথী বলেন, ঈদের দিনে হয়তো পরিবারের সঙ্গে থাকার কথা। কিন্তু আমার পরিবারের সদস্যরাই আমার এসব কাজের সঙ্গে থাকে। এ কারণে কষ্ট ভুলে থাকি। সত্যি বলতে পরিবারকে তেমন সময় দিতে না পারলেও পরিবারের সবাই আমার সঙ্গে কাজ করছে। আমি ভাগ্যবান একসঙ্গে ৫ হাজারের বেশি পরিবার নিয়ে ঈদ আনন্দ উদযাপন করছি।
কোরবানির মাংস কাটাকাটি ও প্যাকেট করতে বিথীকে সহযোগিতা করছে তার নিজের গড়া উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি অ্যান্ড হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন। মানবিক এ উদ্যোগে অংশ নিতে তার সঙ্গী হয়েছেন একঝাঁক স্বেচ্ছাসেবী। তাদের সঙ্গে নিয়েই ঈদের দিনটি অসহায় দুস্থ মানুষদের জন্য উৎসর্গ করছেন বিথী।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটসহ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে সমাজের নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষের এখন অনেকটাই দিশেহারা। এরই মধ্যে ঈদে হু হু করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। এমন পরিস্থিতিতে অসহায়, দুস্থ, কর্মহীন, শ্রমিক ও দিনমজুরসহ মধ্যবিত্ত মানুষরা সমস্যায় পড়েছেন। যাদের একদিন কাজ না করলে চুলায় হাড়ি উঠে না, তারা পড়েছেন সবচেয়ে বিপাকে। এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতেই বিগত সময়ের মতো এ বছরও অন্যান্য উদ্যোগে মানবিক কার্যক্রমে নেমেছে আরিফা জাহান বিথী।
প্রসঙ্গত, আরিফা জাহান বীথি ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে খেলেছেন। ঢাকার ওরিয়েন্ট স্পোর্টিং ক্লাব, কলাবাগান, রায়েরবাজার ক্রিকেট দলে ওপেনিং ব্যাট করতে নামতেন। ২০১৭ সালে অসুস্থতার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে ক্রিকেট ক্যারিয়ার বিসর্জন দিতে হয়েছে তাকে।
ঢাকা থেকে রংপুরে ফিরে ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে রংপুর জেলা স্টেডিয়ামে নারীদের জন্য উইমেন্স ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি নামে প্রশিক্ষণ একাডেমি গড়েন বিথী। সেখানে কয়েক শ নারীকে বিনামূল্যে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি।
ইতোমধ্যে গত সাড়ে তিন বছরে শতাধিকের বেশি নারীকে স্বাবলম্বী করেছেন বিথী। গৃহহীন বৃদ্ধা মা-বাবাকে দিয়েছেন নতুন ঘর। সহায়-সম্বলহীন শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে ভর্তির জন্য আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন। শুধু তাই নয় রংপুর বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ, মাদরাসা নির্মাণ করে দেওয়ার পাশাপাশি পবিত্র কোরআনও বিতরণ করেছেন বিথী।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরকে