২৪০০ পরিবারে এক কেজি করে মাংস পৌঁছে দিল ওবাট
প্রতিবছরের মতো এবারও রংপুর নগরীতে ২ হাজার ৪০০ অসহায়, দুস্থ ও নিম্ন আয়ের পরিবারের মাঝে এক কেজি করে কোরবানির মাংস বিতরণ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওবাট হেলপারস। ঈদের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার (১৮ জুন) মাংস পেয়ে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হতে দেখা যায় অসহায় ও কোরবানি না দেওয়া লোকজনদের। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব অসহায় পরিবারের কাছে এই মাংস পৌঁছে দিতে পেরে সন্তুষ্ট আয়োজকরাও।
মঙ্গলবার সকালে ‘ত্যাগের মহিমায় সবাই মিলে ঈদ উৎসব’ স্লোগানে রংপুর নগরীর স্টেশন রোড রবার্টসনগঞ্জ এলাকায় ২৪টি গরু ও ১২টি খাসি কোরবানি করে সংগঠনটি। মাংস কাটাকাটি শেষে বাড়ি প্রতি এক কেজির প্যাকেট করেন একদল স্বেচ্ছাসেবক। পরে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত প্যাকেট করা মাংস বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দেন সংগঠনটির কর্মীরা।
বিজ্ঞাপন
মাংস পেয়ে রবার্টসনগঞ্জ ক্যাম্পের মুন্নি বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে বাসায় গিয়ে টোকেন দিয়ে আসেন আয়োজকরা। এরই ধারাবাহিকতায় ঈদের দ্বিতীয় দিনে আমাদের হাতে একটি মাংসের ব্যাগ তুলে দেন ওবাট হেলপারস। আমরা অসহায় মানুষ ঠিকমতো মাংস কিনে খেতে পারি না। প্রতিবছর এই ঈদে এক কেজি করে মাংস ওবাট থেকে পেয়ে থাকি। এই মাংস নিতে তাদের কাছে যেতে হয় না। স্বেচ্ছাসেবকরা সুন্দর করে প্যাকেট করে বাড়িতে এসে দিয়ে যায়। এমন আয়োজনের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।
বিজ্ঞাপন
নূরজাহান বেগম নামের আরেকজন বলেন, অনেকের বাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে কখনো কখনো এক টুকরো মাংসও পাই না। অথচ এরা (ওবাট) আমার বাড়িতে এসে মাংস দিয়ে যায়। কোথাও থেকে ঈদে কোরবানির মাংস না পেলেও ওবার্টের মাংস পাব। এদের নিয়ে চিন্তা করি না, যেহেতু ওরা বাড়িতে দেয়। আজকে মাংস পেয়েছি কালকে বড় মেয়েকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াবো ইনশাআল্লাহ।
মুন্নি, নূরজাহানের মতো অনেকের চোখে-মুখে পরিতৃপ্তির হাসি দেখা গেছে। এদের অনেকেই নিম্ন আয়ের মানুষ। অর্থের অভাবে কোরবানি দিতে পারেননি। তারা এক টুকরো মাংসের আশায় পাড়া-মহল্লায় ঘুরে বেড়ান। বিভিন্ন আবাসিক এলাকার বাসাবাড়ির নিচে ও গেটের সামনে দাঁড়িয়ে মাংসের জন্য সমাজের বিত্তবানদের কাছে হাত পাতছেন এসব মানুষ। এদের বাইরেও অনেকে রয়েছেন যারা কারও কাছে গিয়ে এক টুকরো মাংসের আবদারও করতে পারেন না। তাদের জন্য মাংস বিতরণ কর্মসূচি হাতে নেয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওবাট হেলপারস।
২০১৫ সাল থেকে রংপুরে মাংস বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া এই সংগঠনটি প্রতিবছর ঈদের দ্বিতীয় এই কার্যক্রম করে থাকেন। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি আর অর্থনৈতিক সংকট সংকটে যখন সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন তখন এমন উদ্যোগ খুশির বার্তা নিয়ে আসছে বিভিন্ন সময়।
রবার্টসনগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক ক্যাম্প ইনচার্জ শামসুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছি এই সংগঠনের। অনেক মানুষ প্রতিবছর মাংস পাচ্ছেন। অনেক অসহায় দরিদ্র আছে যারা ২৫০ গ্রাম মাংস কিনতে পারেনি। তাদের একমাত্র ভরসার জায়গা ওবাট। এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শুধু মাংসই বিতরণই করে না, সামজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিভিন্ন সময়ে অসহায় দুস্থ মানুষের পাশে এগিয়ে আসছে। অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থীর পড়াশোনার দায়িত্ব তারা নিয়েছে।
ডা. আবুল কাশেম নামের একজন স্বেচ্ছাসেবী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এখান থেকে স্কলারশিপ পেয়ে পড়াশোনা করে এতদূর পর্যন্ত এসেছি। এই সংগঠন শুধু মাংস বিতরণ করে তা নয় ক্যাম্পের ছেলে-মেয়েদেরকে বিনা বেতনে পড়াশোনার ব্যবস্থাও করেছে। ওবাট হেলপারস থেকে শিশু-কিশোরদের লেখাপড়া, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে গুরুত্বসহকারে কাজ করা হচ্ছে।
ওবার্ট হেলপারস ফাউন্ডেশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শাহিনুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছি। আজ প্রায় আড়াই হাজার পরিবারের মাঝে এক কেজি করে মাংস বিতরণ করা হয়েছে। এই কাজের মাধ্যমে আমরা অসহায়, দরিদ্র ও দুস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়াতে পারছি, এটা ভালো লাগার বিষয়। আমরা ঈদের আনন্দ সবার সঙ্গে মিলেমিশে ভাগ করে নিতে প্রতিবছর মাংস বিতরণের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছি। এ ছাড়া আমাদের সেবা ও সহায়তামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ