সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কার ও ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবি আদায়ে পূর্বঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুতে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থা প্রত্যাখ্যান করেন তারা। সুষ্ঠু সমাধান না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১০ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। পরে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্কের মোড় হয়ে রংপুর নগরীর প্রবেশদ্বার মডার্ন মোড়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে অবস্থান নেন। এ সময় তারা ‘বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচির অংশ হিসেবে সড়ক অবরোধ করে রাখেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আদালতের স্থিতাবস্থা প্রত্যাখ্যান করেছেন জানিয়ে বেরোবির বাংলা বিভাগের শামসুর রহমান সুমন বলেন, আদালত ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রেখেছে। তবে এখানে কিছু আইনি দুর্বলতা থাকার সুযোগ রয়েছে। আমরা কোটা নিয়ে স্থায়ী সমাধান চাই। সব গ্রেডে অযৌক্তিক এবং বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় আনতে হবে।

বাংলা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী শিহাব মন্ডল বলেন, আমরা বারবার টালবাহানা দেখতে চাই না। আন্দোলন করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে চাই না। আমরা দেশের সুনাগরিক হতে চাই। আমরা চাই, এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সরকারি চাকরিতে বৈষম্যহীন কোটা ব্যবস্থা চলে আসুক, যেটা বার বার পরিবর্তনের দরকার হবে না।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আহসান হাবিব বলেন, আমাদের দাবি হচ্ছে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সকল গ্রেডে বৈষম্যমূলক কোটা প্রথা বাতিল করে সকল পক্ষের জন্য মোট ৫ শতাংশ কোটা রাখা যেতে পারে। তাই কোটা সংস্কারের বিষয়ে নির্বাহী বিভাগ থেকে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।

এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সড়কের দুইপাশ। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদেরও দেখা যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন -‘কোটা না মেধা-মেধা মেধা’ ‘আপস না সংগ্রাম-সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘আঠারোর পরিপত্র-পুনর্বহাল করতে হবে’, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’ ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আমার সোনার বাংলায়-বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’ ইত্যাদি।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, কোটার কারণে আমাদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। কোনো বৈষম্যহীন রাষ্ট্রে ৫৬ শতাংশ কোটা থাকতে পারে না। বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে কোটার প্রভাব অনেক বেশি। আমরা কোটা বাতিল না, সংস্কার চাই। দ্রুত কোটা সংস্কার না করলে আমরা রাজপথ ছাড়ব না।

এদিকে শিক্ষার্থীদের  ‘বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচির কারণে মডার্ন মোড়ে সড়ক পথে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশকে নিরাপত্তা দিতে দেখা যায়।

প্রসঙ্গত, বুধবার (১০ জুলাই) সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এসময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করতে বলেছেন আদালত। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ৭ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল থাকছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ