লবণাক্ত পানির কারণে নষ্ট হচ্ছে বাগেরহাটের আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের ইনকিউবেটরসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। দেড় বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে পানির কুলিং প্ল্যান। দ্রুততম সময়ে খামারে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা না হলে হাঁসের বাচ্চা ফোটানো সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন খামারের কর্মকর্তারা। 

হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনের জন্য বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের তিন একর জমিতে প্রায় দুই দশক আগে নির্মাণ করা হয়েছিল বাগেরহাট আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার কেন্দ্র। কিন্তু খামারটি চালুর কয়েক বছর পরই নানা সংকটে বাচ্চা উৎপাদন ব্যাহত হয়ে আছে। এর প্রধান কারণ লবণাক্ত পানি, এ কারণে নষ্ট হচ্ছে খামারের আধুনিক মানের যন্ত্রাংশ। ব্যাহত হচ্ছে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো, নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের ইনকিউবেটরসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। এসব সংরক্ষণের জন্য দ্রুত সুপেয় পানির ব্যবস্থা দাবি সংশ্লিষ্টদের। 

আমিষের ঘাটতি পূরণ ও দারিদ্র বিমোচনে বিশেষ ভূমিকা রাখার প্রত্যাশা নিয়ে আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার গড়ে তোলা হয়। গত চার বছরে সফলতার সাথে ডিম থেকে একদিনের বাচ্চা উৎপাদন করে আশপাশের জেলাগুলোতে স্বল্প মূল্যে সরবরাহ করে আসছে খামার। 

বাগেরহাট সোনাতলা এলাকার খামারি শেখ নিপু বলেন, হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করে এক-দুই মাস লালন-পালন করে প্রতি জোড়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা বিক্রি করি। এতে  ভালো লাভ হয়।

একই এলাকার ইউসুফ নামের আরেক খামারি বলেন, আগের মতো চাহিদার বাচ্চা এবং ডিম পাই না। খামারটির উন্নয়ন হলে প্রান্তিক খামামিরা উপকৃত হবেন।

আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের হ্যাচারি এ্যাটেনডেন্ড মোহাম্মদ শামিম বলেন, এখানে আমাদের হ্যাচারি থেকে যে সকল বাচ্চা উৎপাদন হয় সেগুলো খুলনা বিভাগসহ বাগেরহাটের দক্ষিণ অঞ্চল যেমন মোড়লগঞ্জ, শরণখোলা, চিতলমারী, বরিশাল, পটুয়াখালীতে সরকারি মূল্যে বিক্রি হয়। এতে মানুষের পুষ্টি ও চাহিদা পূরণ হয়। এছাড়াও হাঁসের বাচ্চা বড় করে বিক্রি করে লাভবান হতে পারেন খামারিরা।

খামারটির পোল্ট্রি টেকনিশিয়ান উজ্জ্বল রায় বলেন, এই হাঁস প্রজনন খামারে একদিন বয়সের হাঁসের বাচ্চা বিক্রি হয় ২৫ টাকায়। একই হাঁসের বাচ্চা বাজারে বিক্রি হয় ৪০-৫০ টাকায়। খামারে উৎপাদিত হাঁস অন্য হাঁসের তুলনায় আলাদা। দৈহিক গঠন অন্য হাঁসের চেয়ে বেশ বড় হয়। বছরে ১০ মাস ডিম দেয়। খামারে ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বছরে ১ লাখ ৮০ হাজার  হলেও উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ২৯০ টি। 

তিনি আরও বলেন, চীন থেকে আনা ইনকিউবিটরের মাধ্যমে এখানে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো হয়। খামারে উৎপাদিত হাঁসের জাতের মধ্যে রয়েছে চায়না বেইজিং, জিংডিং হাঁস। এছাড়া হাঁস পালনের জন্য নির্মাণ করা হয় ৬ টি লেয়ার শেড, একটি হ্যাচারি, একটি গোডাউন, একটি ডরমেটরি ভবন, একটি জেনারেটর ভবন, একটি অফিস কাম ট্রেনিং সেন্টার, একটি গাডরুম ও সেলস সেন্টার, একটি ব্রন্ডার শেড। 

 

আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের সিনিয়র কর্মকর্তা ( ভারপ্রাপ্ত) এ.এফ.এম ফয়জুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের কাঁঠাল এলাকায় তিন একর জমিতে প্রায় দুই দশক আগে নির্মাণ করা হয়েছিল হাঁস প্রজনন খামার। খামারে স্থাপিত গভীর নলকূপ লবণাক্ত পানি ও আয়রনের কারণে ডিম ফুটানো বাচ্চা ইনকিউবেটারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে বাচ্চা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অতি দ্রুত সুপেয় পানির নলকূপ স্থাপন হলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাহেব আলী বলেন, অতিরিক্ত লবণের কারণে ডিম ফুটানো ইনকিউবেটরসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে  জানানো হয়েছে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।

শেখ আবু তালেব/ এনটি