‘আমার ছেলে অপরাধ করলে জেলে দিত, গুলি করল কেন?’
নিজ বাড়িতেই নারীদের জন্য তালিমুল মিল্লাত মহিলা মাদরাসা চালু করেছিলেন নূরে আলম সিদ্দিক রাকিব (১৯)। এভাবেই চলছিল রাকিবের সুখের জীবন। পরিবারের পছন্দে বিয়ে করেছিল বিগত ৮ মাস আগে। বর্তমানে তার স্ত্রী সাদিয়া ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। দাম্পত্য জীবনের প্রথম সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার আগেই বিগত ২০ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কলতাপাড়া বাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত হন নূরে আলম সিদ্দিক রাকিব। এতে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক নিহত রাকিবের পরিবার।
বিজ্ঞাপন
গতকাল শনিবার (২৭ জুলাই) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত রাকিবের বাড়ি গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের দামগাঁও গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল হালিম। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে রাকিব পরিবারের তৃতীয় সন্তান।
নিহত রাকিবের মামা ওয়াজকরুনী বলেন, মাদরাসার ক্লাস শেষ করে বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে কলতাপাড়া বাজারে গিয়েছিল রাকিব। সেখানে হঠাৎ পুলিশের সাথে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের ছোড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় রাকিব।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, পরিবারের একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে কাতর পরিবার। ঘটনার দিন এক আত্মীয়ের বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিল রাকিবের বাবা-মা। সেখানে থেকে রাকিবের গায়ে গুলি লাগার খবরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে তার মা। সেই থেকে এখনও তিনি স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারছেন না। শুধু একটি কথাই বার বার বলছেন- তোমরা আমার ছেলেকে এনে দাও।
রাকিবের বাবা আব্দুল হালিম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, কী অপরাধ ছিল আমার ছেলের? সে কোনো রাজনীতি করে না, কেন তাকে গুলি করে মেরে ফেললো পুলিশ। আমার ছেলে অপরাধ করলে জেলে দিতে পারত পুলিশ, গুলি করল কেন? এখন আমার সব শেষ। আমি কার কাছে বিচাপ দেব।
এ ঘটনায় শোকাহত নিহত রাকিবের প্রতিবেশীরাও। তারা জানায়, রাকিব অনেক ভালো ছেলে ছিল। সে পাঁচ ওায়াক্ত নামাজ পড়তো। কোনো দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। বাড়িতে একটি মাদরাসা চালু করে এলাকার মেয়েদের আরবি শিক্ষা দিত সে।
প্রতিবেশী কদ্দুস ফকির বলেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক। ছেলে হারানোর শোকে পরিবারের কান্না দেখলে আমাদের চোখের পানি এসে যায়। আল্লাহ তাকে মাফ করুন।
জানা যায়, চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনে ঘটনারদিন কলতাপাড়া বাজার এলাকায় দুপুর ১২টার দিকে পুলিশের সাথে সংর্ঘষে ১৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়। এদের মধ্যে ৪ জন মারা যায়। বাকিরা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
আমান উল্লাহ আকন্দ/আরকে