কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতা
রংপুর বিভাগে ৩৯ মামলায় গ্রেপ্তার ৬৮২
রংপুর বিভাগে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংস ঘটনায় মেট্রোপলিটন এলাকাসহ রংপুর বিভাগের আট জেলায় ৩৯টি মামলায় এখন পর্যন্ত ৬৮২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সুনির্দিষ্ট তথ্য উপাত্ত ও ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন।
মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত নাশকতা-সহিংসতার অভিযোগে রংপুর মহানগরীর মেট্রোপলিটন পুলিশের ২২ মামলা ও বিভাগের আট জেলা পুলিশের দায়ের করা ১৭টি মামলায় মহানগর এলাকায় মোট ১৯২ জন ও জেলা পুলিশ ৪০৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বিজ্ঞাপন
রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানান, ২২টি মামলায় ৩০ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সর্বমোট ১৯২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অপরদিকে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম জানান, একই সময়ে বিএনপি-জামায়াতের ৬৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, চিহ্নিত অপরাধীদের ফুটেজ দেখে দেখে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নিরপরাধ কাউকেই হয়রানি কিংবা গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। নিহত-আহত, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সব বিষয়ে নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ তদন্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমি অনুরোধ করব সকলে একটু ধৈর্য ধরুন, অপেক্ষা করুন। আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। আমাদের একটু সময় দিন। আমরা যে প্রক্রিয়াতে জানমালের ক্ষতি এড়ানোর চেষ্টা করেছি, যে প্রক্রিয়াতে কোনো নিরীহ মানুষ ধরপাকড় করিনি, সেই একই প্রক্রিয়াতে তদন্তসহ ভবিষ্যতে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করব।
পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন জানান, মেট্রোপলিটন এলাকা বাদে বিভাগের রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট,নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলায় এ সময়ে ৪৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও রংপুর জেলা পুলিশ মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করলেও কুড়িগ্রাম জেলার থানাগুলোতে কোটা সংস্কার নিয়ে কোন মামলা হয়নি। তবে রংপুরে ৬৫ এবং কুড়িগ্রামে পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। যারা অন্য জায়গায় নাশকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, রংপুর মেট্রোপলিটন এলাকা বাদে রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে মানুষের কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে সম্পদের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দিনাজপুর ও সৈয়দপুরে। বিভিন্ন অফিস আদালত ভাঙচুর করেছে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় যারা নাশকতা করেছে অগ্নিসংযোগ করেছে, সম্পদ বিনষ্ট করেছে তাদের শনাক্ত করে যথাযথ তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তার অভিযানের পাশাপাশি তদন্ত প্রক্রিয়াও অব্যাহত থাকবে জানিয়ে ডিআইজি বলেন, দায়ের করা মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। এই তদন্তে যারা নাশকতা এবং ভাঙচুরে অংশগ্রহণ করেছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে যার যার অপরাধ অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়ায় তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। তদন্ত ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আমরা এতটুকু নিশ্চিত করে বলতে পারি যে নিরপরাধ কোনো ব্যক্তিকে সম্পৃক্ত করা হবে না। আমাদের তদন্তের মধ্যে স্বচ্ছতা আছে। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে যারা অভিযুক্ত হবে তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। পেশাদারিত্ব ও বিধি ফলো করে আমরা সব কার্যক্রম করছি।
এদিকে র্যাব-১৩ রংপুরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সালমান নূর আলম গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, একই সময়ে র্যাব রংপুর বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে রংপুর মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে ১১ জন, নীলফামারীতে ২৯ জন এবং গাইবান্ধা জেলায় ৩ জন রয়েছেন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসকেডি