পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে গত বুধবার থেকে চলছে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত। বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পাহাড়ের ঢালে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন।

শুক্রবার (২ আগস্ট) বিকেলে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিব শংকর বসাকের নেতৃত্বে প্রশাসনের একটি বিশেষ টিম শহরের ঝুঁকিপূর্ণ রুপনগর, শিমুলতলী, লোকনাথ মন্দির সংলগ্ন পাহাড়ের ঢালসহ বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, জেলা স্কাউটস ও প্রশাসনের বিশেষ রেসকিউ টিমের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তারা পাহাড়ের ঢালে অনিরাপদভাবে বসবাসরতদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।

তবে প্রশাসনের তৎপরতা থাকলেও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনাগ্রহী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। বাড়িঘরের নিরাপত্তার অজুহাতে এখনো নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছেন বেশিরভাগ এলাকার বাসিন্দা। পাহাড়ের ঢালে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন ১ হাজার ৩৬৪ জন।

শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন বৃষ্টি হচ্ছে। তবে আমাদের এখানে এখনো কোনো অঘটন ঘটেনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোকজন এসেছে, আমরা অনিরাপদ মনে হলে চলে যাব।

শিমুলতলী সমাজ উন্নয়ন কমিটির সভাপতি আবু বক্কর লিটন মিঠু বলেন, আজ সকালে আমাদের এখানে পৌরসভার মেয়র মহোদয় এসেছিলেন এবং বিকেলে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তরাও এসেছেন। বৃষ্টি হলেও এখনো আমাদের এখানে পরিবেশ নিরাপদ রয়েছে। বৃষ্টি বাড়লে আমরা লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেব।

রুপনগর এলাকার বাসিন্দা শিউলি আক্তার বলেন, প্রতি বছরই বৃষ্টি হলে প্রশাসনের লোকজন আমাদের সরে যেতে বলে। কিন্তু আমরা চলে গেলে আমাদের বাড়িঘর অনিরাপদ হয়ে যায়, ঘরের জিনিসপত্র চুরি হয়। তাই আশ্রয়কেন্দ্রে যাইনি। আর তাছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার মত পরিস্থিতিও এখনো আসেনি।

এদিকে জেলা স্কাউটসের সভাপতি নুরুল আবছার অভিযোগ করে বলেন, ২০১৭ সালে পাহাড়ধসে ১২০ জন মানুষের মৃত্যুর পরও এসব এলাকায় নতুন করে বসতি গড়ে উঠেছে। নির্বিচারে পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ এখনো চলমান আছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের ঢালে বসবাসরত মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি হয়। অবৈধভাবে পাহাড় কাটাসহ অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদের দাবি জানান তিনি।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, গত কয়েকদিনের টানা বষর্ণে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পাহাড়ধসে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ও ঢালে বসবাসরতদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য আমরা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছি। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে গিয়ে সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করছে পাশপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।  

তবে শহরের বি.এম ইন্সটিটিউট, রাঙামাটি বেতার, লোকনাথ মন্দিরসহ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, এখনো আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়নি। অনেক আশ্রয়কেন্দ্র এখনো তালাবন্ধ অবস্থায় রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেননি কেউই।

মিশু মল্লিক/আরকে