খুলনায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত পুলিশ কনস্টেবল সুমন কুমার ঘরামীর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) লাইন্সে নেওয়া হয়। সেখানে সুমনের পরিবারের সদস্যের আর্তনাদ ও আহাজারিতে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

পরে সুমনের মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর পুলিশ লাইন্সে গার্ড অব অনার শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলে তারা মরদেহ নিয়ে কচুয়ায় রওনা হন। সেখানেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

এ সময় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক, অতিরিক্ত কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম ও তাসলিমা খাতুনসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কেএমপি কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, সুমন কুমার ঘরামী গতকাল শহীদ হয়েছেন। নিহতের পরিবারকে তাৎক্ষণিক এক লাখ টাকা এবং মরদেহ সৎকারে আরও ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ মহাপরিদর্শকের পক্ষ থেকে আট লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং নগদ দুই লাখ টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য করা হবে। সুমনের পরিবারে কেউ শিক্ষিত থাকলে এবং পুলিশে চাকরির উপযোগী হলে তাকে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কেএমপি আজীবন পরিবারটির পাশে থাকবে।

পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, গতকাল সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রথমে মিছিল শান্তিপূর্ণ ছিল। যখন তারা হরিণটানা আক্রমণ করে তখন থানা রক্ষা করতে যেতে আমাদের ১৪-১৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। ওখানে একটি মামলা হয়েছে, পিকআপ জ্বালিয়ে দেওয়ায় মামলা হয়েছে এবং গল্লামারীতে সুমন কুমার ঘরামীকে হত্যাসহ আরও ১৫-২০ জন পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে প্রহারের ঘটনায়ও মামলা হয়েছে। সবগুলো মামলা অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ছাত্রদের আড়ালে মুখোশধারীরা পুলিশকে হত্যা করেছে। তারা সরকারি সম্পদ ধ্বংস করেছে। তাদেরকে গ্রেপ্তার করা আমাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। এই দায়িত্ব আমরা অবশ্যই পালন করবো।

মোজাম্মেল হক আরও বলেন, আহত ২১ জন সদস্যের মধ্যে দুইজন আইসিইউতে রয়েছে। প্রস্তুত হয়েই সন্ত্রাসীরা আমাদের পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। আমার ভাইকে যারা পিটিয়ে হত্যা করেছে তাদের ভিডিও, ছবি পাওয়া গেছে। তাদের নামপরিচয় খুঁজে বের করা হচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তার করে আইনে সোপার্দ করা হবে।
 
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় সংঘর্ষ চলাকালে আন্দোলনকারীদের পিটুনিতে সুমন কুমার ঘরামী নিহত হন। তার বাড়ি বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলায়। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন নগরীর বয়রা এলাকায়। তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সোনাডাঙ্গা জোনের সহকারী কমিশনার সৌমেন বিশ্বাসের দেহরক্ষী ছিলেন।

মোহাম্মদ মিলন/এএমকে