খুলনায় অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে আওয়ামী লীগ কার্যালয়, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিনের বাড়িসহ বিভিন্ন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। 

রোববার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এসব স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধরা। বিভিন্ন আবাসিক ভবনের সিসি ক্যামেরাও ভাঙচুর করা হয়।  

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রোববার সকাল থেকে লোয়ার যশোর রোডের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কিছু আন্দোলনকারী পিকচার প্যালেস মোড় থেকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেয়। 

এ সময় দুপক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মাঝে ককটেল ও গুলির শব্দ শোনা যায়। আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পিছু হটে। তারা কার্যালয় গিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং আসবাবে আগুন ধরিয়ে দেয়। কার্যালয়ের নিচে বেশকিছু মোটরসাইকেলেও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এসময় খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা এবং নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজনকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। গুরুতর অবস্থায় তাদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। জখম অবস্থায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ হাওলাদার, কেসিসির কাউন্সিলর কনিকাসহ আরও ৩ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া সংঘর্ষের সময়ে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে আন্দোলনকারীরা।  

এছাড়া নগরীর শেরে বাংলা রোডের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও তার ভাই সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের বাড়ি ভাংচুর অগ্নিসংযোগ করে। হামলা হয় নগর ভবন, জেলা পরিষদ ও প্রেস ক্লাবে। জেলা পরিষদ কার্যালয়ে প্রবেশ করে সামনে থাকা ৪টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি মোটরসাইকেল ছিল যমুনা টিভির খুলনা প্রতিনিধি প্রবীর বিশ্বাসের। পরে আরেক দফা ভাঙচুর করে প্রেসক্লাবে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। নৌ-পরিবহন মালিক গ্রুপের ভবনেও ভাঙচুর চালানো হয়।  

বিকালে শিববাড়ি মোড়ে সমাবেশ শেষে ফিরে যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্থানে হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আন্দোলনকারীরা নগরীর পিটিআই মোড়ে ২৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল আহসান টিটোর কার্যালয়, রয়্যাল মোড়ে ২৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজুল ইসলাম টিটোর ব্যক্তিগত কার্যালয়, গল্লামারী এলাকায় যুবলীগ নেতা শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

শেরে বাংলা সড়কে আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন হোটেল গ্রান্ড প্লাসিড ও ফারাজীপাড়া এলাকায় মহানগর যুবলীগের সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশের ফ্লাটে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এছাড়া শেখপাড়া এলাকায় ২০ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। এ সময় সিসি ক্যামেরা থাকা আশপাশের বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়। নগরীর কেডিএ এভিনিউতে বাংলালিংক অফিস ভাঙচুর করে সামনে ৪টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

দুপুরে আন্দোলনকারীরা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল, সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদীর ব্যক্তিগত কার্যালয় ও খুলনা ক্লাবে ভাঙচুর করে। তারা খুলনা ক্লাব, সংসদ সদস্যের অফিসের নিচে থাকা ৩টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়।

খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক জানান, তার বাড়িতে ২ দফায় হামলা হয়েছে এবং সংসদ সদস্য শেখ হেলালের বাড়িতে ২ দফায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে আন্দোলনকারীরা।

তারা রূপসা মোড় থেকে কয়লা ঘাট পর্যন্ত যতো সরকারি দপ্তর রয়েছে, সবগুলোতে ভাঙচুর চালায়। রূপসা ঘাটে অবস্থিত রিভার ভিউ রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে সব তসনছ করে দেয়। হামলা হয় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার অধিকারীর বাসভবনেও। আন্দোলনকারীদের বেশিরভাগই খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা এলাকায় ছিল।

অপরদিকে রোববার বিকালে নগরীর খালিশপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের বাড়ি, খালিশপুর থানা বিএনপি ও ১৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে বিএনপি নেতারা।  

এদিন বিএনপি মিডিয়া সেল থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, শাসকদলের নেতাকর্মীরা খুলনা থেকে বিতাড়িত হয়ে খালিশপুরে বিএনপি নেতার বাড়ি ও অফিসে তাণ্ডব চালিয়েছে। অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। তারা জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের খালিশপুরস্থ বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বিবৃতিদাতারা হলেন, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা, জেলা আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান, মহানগর সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী প্রমুখ।

মোহাম্মদ মিলন/এমএসএ