অভাবে জমজ সন্তানদের খাওয়াতে পারছেন না বাবা
বাড়িত গেইলে ছইল দুইটার মুখের পাকে তাকা (তাকানো) যায় না। কষ্টোত বুক ফাটি যায়। ভালো (পুষ্টিকর) খাওয়াতো দূরের কথা প্রতিদিনের খাওয়ায় (খাবার) জোগাড় করবার পারো না। এমন করি চললে ছইলগুল্যাক কেমন করি বাঁচাইম। এত কষ্ট আর ভাল নাগে না। চোখে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে পড়তে কথাগুলো বলছিলেন চা বিক্রেতা আরিফুল ইসলাম।
ত্রিশ বছর বয়সী আরিফুল রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামে থাকেন। অভাব অনটনের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা তার। স্ত্রী ও তিন ছেলে সন্তানের ঠিকমতো ভরণপোষণ দিতে না পেরে ভীষণ বিষণ্নতায় কাটছে তার একেক একটি দিন।
বিজ্ঞাপন
মিঠাপুকুর উপজেলা সদরে ব্যাচেলর কোয়ার্টারের সামনে কথা হয় আরিফুলের সঙ্গে। সেখানে কোয়ার্টারের পাশে পরিত্যক্ত একটা জায়গায় ঝুপড়ি ঘর তুলে চায়ের দোকান দিয়েছেন তিনি। প্রতিদিন যা বিক্রি হয়, তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। পরিবারে ২২ মাস বয়সী প্রতিবন্ধী জমজ সন্তানের চিকিৎসার করানোর সামর্থ্য নেই তার।
আগের মতো চায়ের দোকানে বিক্রি নেই দাবি করে আরিফুল বলেন, আইজ (আজ) চা ব্যাচা হয় নাই। ঘরোত কোনো খাবারও নাই। প্রতিবন্ধী দুইটা জমজ ছাওয়াক নিয়্যা না খ্যায়া থাকইপার নাগবে (লাগবে)। বাড়িত গেইলে ছাওয়ার মুখের পাকে তাকাই কষ্টোতে বুক ফাঁটি যায়।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, মুই তো নিজে গরিব মাইনষের ছাওয়া। তার ওপর মোর ঘরোত দুইটা প্রতিবন্ধী জমজ ছাওয়া। বাড়ি থাকি সকালে বের হইলে বউ-ছাওয়ারা সারাদিন চাউল-ডাইলের অপেক্ষাত থাকে। ছাওয়ার খাবার নিয়্যা বাড়ি না গেইলে বউ বেজার (রাগ) হয়। এই রমজান আর করোনার লকডাউনোত বেচাবিক্রি নাই। এ্যলা মাঝে মধ্যে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে। অভাবের কারণে খুব কষ্টোত আচু।
সরকারি সহায়তা না পাওয়ার আক্ষেপ থেকে আরিফুল বলেন, যেদিন ব্যাচা-কিনা হয়, সেদিন কোনো রকম একনা খরচ করি বাড়ি নিয়া যাও। আর যেদিন হয় না, সেদিন ছইলোক নিয়া না খায়া থাকা নাগে। মাইনষে কয় সরকার গরিব ছইলের জনতে শিশুখাদ্য দেয়। মুইতো হামার চেয়ারম্যান-মেম্বারের কত কনু। কায়ো কোনো ব্যবস্থা করি দিলে না।
শিশুসন্তানদের চিকিৎসায় সমাজের বিত্তবানদের কাছ থেকে সহযোগিতার আকুতি জানিয়ে আরিফুল বলেন, নিজে সংসার চালবার পারো না, ছইলের চিকিৎসা করাই কেমন করি? যদি কারো সহযোগিতা পানু হয় ছইল দুইটাক ভালো ডাক্তার দ্যাকে চিকিৎসা করা সম্ভব হইল হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত কায়ো মোক সাহায্য সহযোগিতা করে নাই।
প্রতিবেশী আব্দুর রহমান বলেন, অনেক দিন ধরে আরিফুল চায়ের দোকান করছে। চা বিক্রি করে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছেন। কিন্তু তার প্রতিবন্ধী দুই সন্তানের চিকিৎসা করাতে পারছে না। তার অভাব অনটনের কথা সবাই জানে। কিন্তু চেয়ারম্যান-মেম্বার এখন পর্যন্ত তাকে সহযোগিতা করেনি।
ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) মো. মিজানুর রহমান জানান, আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য চেষ্টা করছি। একটু সময় লাগবে।
এ ব্যাপারে ১৪ নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, নানা প্রতিকূলতার কারণে তাকে সহায়তা দেওয়া সম্ভব হয়নি। সামনের দিনে অবশ্যই আরিফুলকে সহায়তা করা হবে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস