তবুও যেতে হবে বাড়ি
পিকআপে বাড়ি যাচ্ছে মানুষ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের নির্দেশনায় দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। ঈদের ছুটিতে কর্মস্থলে থাকতে বলা হলেও তা মানছেন না বেশিরভাগ মানুষ। যে যেভাবে পারছেন বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন। দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ঘুরমুখো এসব মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কেউ ট্রাকে কেউ পিকআপভ্যানে চরম ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার (১১ মে ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে তিনগুণ ভাড়া দিয়ে খোলা পিকআপে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছেন। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছেন সবাই। অনেকে বিভিন্ন উপায়ে মহাসড়কের এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে পারলেও সেখান থেকে নতুন করে কোনো পরিবহন পাচ্ছেন না। দু-একটি খোলা ট্রাক ও মালবাহী ট্রাক পাওয়া গেলেও তাতে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত গাড়ির চাপ রয়েছে। উত্তরবঙ্গ যেতে মহাসড়কের টাঙ্গাইলের রাবনা বাইপাস, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রচুর মানুষ গাড়ির জন্য সড়কে দাঁড়িয়ে আছেন। একটা ট্রাক বা পিকআপ দাঁড়ালেই তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন মানুষ। অনেকেই এলেঙ্গা থেকে মোটরসাইকেলযোগে সিরাজগঞ্জের কড্ডা পর্যন্ত যাচ্ছেন ভিজে ভিজে। কারও মধ্যে করোনা সচেতনতা নেই। ফলে বৃষ্টিতে ভিজে এবং গাদাগাদি করে বাড়ি ফেরায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় দিনাজপুরের কাদের মিয়ার সঙ্গে। তিনি কাজ করেন ঢাকার একটি কোম্পানিতে। এলেঙ্গা এসেছেন বিকেল ৫টার দিকে। কিন্তু সন্ধ্যা ৭টার সময়ও গাড়ির দেখা পাননি। ইফতার শেষে আবারও মহাসড়কে দাঁড়িয়েছেন গাড়ি পাওয়ার আশায়।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, বাড়ি যাওয়ার গাড়ি পাচ্ছি না। যেসব খোলা পিকআপ আসছে সেগুলোতে লোকজনের গাদাগাদি। আবার মালবাহী ট্রাক পেলেও তাতে বেশি টাকা চায়। পরিবার নিয়ে ট্রাকের মালমালের ওপর বসে যাওয়া বিপজ্জনক। অপেক্ষা করছি মোটামুটি সুবিধাজনক কোনো যান পাওয়ার আশায়। রাত যতই হোক, বাড়ি যেতে হবে।
বগুড়ার বাসিন্দা লিয়াকত হোসেন বলেন, কয়েক ঘণ্টা ধরে গাড়ির অপেক্ষায় আছি। কিন্তু কিছু পাচ্ছি না। এমনিতেই শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো না। এর মধ্যে বৃষ্টি পড়ছে। গাড়ির জন্য মহাসড়কে ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছি।
গাড়ির অপেক্ষায় থাকা নিম্ন আয়ের এসব মানুষজন জানান, সব খোলা, শুধু বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফেরি খুলে দেওয়া হয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে যদি বাস চলতে দিত তাহলে মানুষের এই দুর্ভোগ হতো না।
এলেঙ্গা বাসন্ট্যান্ডে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য জানান, বিকেল থেকে মহাসড়কে গাড়ির চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। ইফতারের পর মানুষের সংখ্যা আরও বাড়ে। সবাই ঈদে বাড়ি ফিরতে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। যে যেমন যানবাহন পাচ্ছেন তাতে করেই বাড়ি ফিরছেন।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইয়াসির আরাফাত জানান, সন্ধ্যার পর মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে। দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল করছে না। এলেঙ্গা অংশে বহু মানুষ গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে।
অভিজিৎ ঘোষ/আরএআর/জেএস