শেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়েছে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। নিহতরা শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের বাঘেরচর গ্রামের বাসিন্দা। সোমবার (১৭ মে) শত শত মানুষ নিহতদের বাড়িতে ভিড় করে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রোববার (১৬ মে) রাতে শেরপুর সদর উপজেলার বাঘেরচর গ্রামের বাসিন্দা আমান উল্লাহ (৩৬), তার বোন নাজমা আক্তার (৩২) ও নাজমা আক্তারের মেয়ে লালমনি (৭) ঢাকার উদ্দেশ্যে একটি পিকআপ ভ্যানে করে শেরপুর থেকে রওনা হন। এরপর রাত দেড়টার দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয় ওই পিকআপ ভ্যানটি। এতে পিকআপ ভ্যানে থাকা একই পরিবারের তিনজন নিহত হন। এতে গুরুতর আহত হন পিকআপচালক আকরাম হোসেন (৫০)। 

নিহত আমানউল্লাহর স্ত্রী আন্জু বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামী কাঁচামাল ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি শেরপুর থেকে কাঁচামাল নিয়ে রাজধানী ঢাকায় বিক্রি করতেন। তার অনেক স্বপ্ন ছিল। তিনি কাঁচামাল বিক্রি করে টাকা জমিয়ে ছোট ভাঙাচোরা ঘরটি ভেঙে বিল্ডিং করবেন। ছেলেকে বড় ডাক্তার বানাবেন। কিন্তু তার সেসব স্বপ্ন পূরণ হলো না।

নিহত আমানউল্লাহর চাচা আব্দুল করিম বলেন, আমার ভাতিজা অনেক ভালো মানুষ ছিল। সে দারিদ্রের মধ্যে বড় হয়েছে। আমানউল্লাহ চাইতো তার ছেলে আরিফ (৬) যেন অভাবে না বড় হয়। তাই সে কষ্ট করে শেরপুর থেকে কাঁচামাল নিয়ে ঢাকায় বিক্রি করতো। যেন সে কিছু বাড়তি টাকা আয় করতে পারে। কিন্তু এই সড়ক দুর্ঘটনা তার স্বপ্ন কেড়ে নিল। 

আমানউল্লাহর আরেক চাচা ইউসুফ আলী বলেন, একই দিনে এক পরিবারের তিনজন সদস্য মারা গেল। এটা আমরা কেউ মানতে পারছি না। পুরো এলাকা আজ নিস্তব্ধ। এখন আমার ভাতিজার এই ছোট ছেলেটার দায়িত্ব কে নেবে, তার বউয়ের ভরণপোষণ কে দেবে? 

চরশেরপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জিকির আলী মহর বলেন, আমি ঘটনা জানার পরপরই নিহতদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছি। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তিনজনের মরদেহ বুঝে পেয়েছি। আমরা মরদেহ নিয়ে শেরপুরের দিকে রওনা হয়েছি।

চরশেরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সুরুজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। আমি ইউনিয়ন পরিষদের কাজে সদর উপজেলা পরিষদে আছি। ব্যক্তিগতভাবে ও আমার ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারের পাশে থাকব।

জাহিদুল খান সৌরভ/আরএআর