‘বিশুদ্ধ আত্মা-সুন্দর সমাজ’ স্লোগানে রংপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিভাগীয় সাহিত্য সম্মেলন। রোববার (১ ডিসেম্বর) রংপুর টাউন হলে সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে দিনব্যাপী চলে এই সম্মেলন। বিভাগীয় লেখক পরিষদ রংপুর আয়োজিত সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধন করেন তিন বাংলার গ্লোবাল সভাপতি, কবি ও সম্পাদক সালেম সুলেরী।

বিভাগীয় লেখক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী মো. জুননুনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আশরাফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার রংপুরের উপপরিচালক রায়হান কবির।

সম্মানিত অতিথি ছিলেন আমেরিকা প্রবাসী কবি ও কণ্ঠশিল্পী সহিদুল সরকার, রংপুর মিউজিক্যাল ব্যান্ডস্ অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক জহির আলম নয়ন।

সকালে প্রথম পর্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের স্মরণে নিরবতা পালন করা হয়। এরপর শহীদ আবু সাঈদের বিরল আত্মাহুতি নিয়ে বিশেষ বক্তব্য দেন এনটিভির সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট একেএম মঈনুল হক।

স্বাগত বক্তব্য দেন পরিষদের সহসভাপতি ও সম্মেলন উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক রশীদুল ইসলাম চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জাকির আহমদ।

উদ্বোধনী পর্ব শেষে রংপুর বিভাগের আট জেলা থেকে আগত কবি-সাহিত্যিক-লেখকরা তাদের জেলাভিত্তিক প্রাণবন্ত পরিবেশনা উপস্থাপন করেন। এরপর লেখালেখিবিষয়ক সেমিনারে লেখালেখির মৌলিক জ্ঞান বিষয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক মোতাহার হোসেন সুজন। লেখকদের বানান সচেতনতা বিষয়ে আলোচনা করেন বিভাগীয় লেখক পরিষদের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মজনুর রহমান।

সম্মেলনের সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন কবি, নাট্যকার প্রাবন্ধিক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ফরিদ আহমদ দুলাল। সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বেতার রংপুরের আঞ্চলিক পরিচালক আব্দুর রহিম, রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ এর সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন, তারাগঞ্জ ওয়াকফ্ এস্টেট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রফেসর ড. এআইএম মুসা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. এমদাদুল হক, কবি, প্রাবন্ধিক ও শিশু সাহিত্যিক বাবুল আনোয়ার, জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমির কালচারাল অফিসার নুঝাত তাবাসসুম রিমু।

আরও বক্তব্য দেন বিভাগীয় লেখক পরিষদ রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি এটিএম মোর্শদ ও সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান সোহাগ।

অনুষ্ঠানে রংপুর বিভাগের আট জেলার প্রায় চার শতাধিক কবি, সাহিত্যিক ও লেখক অংশ নেন। তাদের মুগ্ধ পদচারণায় মিলনমেলায় পরিণত হয় টাউন হল চত্বর। অংশগ্রহণকারীরা জানান, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর মুক্ত পরিবেশে তারা লেখালেখি করতে পারছেন। এই সম্মেলনে নিজেদের মধ্যে লেখালেখির ভাব বিনিময়ের পাশাপাশি পারস্পরিক সম্পর্ক জোড়ালো হচ্ছে। যা লেখকদের লেখায় চব্বিশের আকাঙ্ক্ষাকে সুচারুভাবে প্রতিফলিত করবে।

বিভাগীয় লেখক পরিষদ রংপুর-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাকির আহমেদ বলেন, রংপুর বিভাগের লেখকদের নিবিড় বন্ধন তৈরি করতেই এই উদ্যোগ। মুক্ত পরিবেশে লেখকরা অংশ নিয়েছেন এবং নিজেদের মধ্যে তারা লেখা সম্পর্কিত বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন। আমরা মনে করি, এই আয়োজন রংপুর বিভাগের কবি-সাহিত্যিক ও লেখকদের লেখালেখিকে আরও সমৃদ্ধ করবে। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সৃজনশীল লেখালেখিকে উৎসাহিত হবে।

সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা দেওয়া হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাককে (রংপুর)। এ ছাড়া গুণী সাহিত্যিক সম্মাননা পেয়েছেন দিলরুবা শাহাদৎ (রংপুর), মজনু শাহ (নীলফামারী), আতাউর মালেক (লালমনিরহাট), শামীম মাহবুব (গাইবান্ধা), জিল্লুর রহমান (দিনাজপুর), জুনায়েদ কবির বাবু (ঠাকুরগাঁও), কিসওয়ার জাহান ওয়াহেদা বানু (পঞ্চগড়), আরমান আলী (কুড়িগ্রাম)। সেরা সংগঠক সম্মাননা পান রশীদুল ইসলাম চৌধুরী।

সেরা শাখা সংগঠনের সম্মাননা পেয়েছে গাইবান্ধা জেলা কমিটি। বন্ধুপ্রতিম সংগঠন হিসেবে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে ছান্দসিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী রংপুরকে। পরে বিভাগের আট জেলার কবি-সাহিত্যিক ও লেখকদের নিয়ে সাহিত্য সম্মেলন কেন্দ্রিক বিশেষ স্মারকগ্রন্থ ‘মানুষ’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে