দিন দশেক আগে একটি মুদিখানার দোকান থেকে দুই লিটারের একটি সয়াবিন তেলের বোতল কিনেছিলেন জয়পুরহাট জেলা শহরের সবুজনগর মহল্লার জেসমিন আকতার। এরপর গত চার দিন ধরে শহরের পূর্ব বাজারের কয়েকটি দোকানে গিয়ে তিনি দুই লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল পাননি, বাধ্য হয়ে খোলা সয়াবিন তেল কিনতে হয়েছে। 

জেসমিন আকতার বলেন, বোতলের তেল পাওয়া যাচ্ছে না। পূর্ব বাজারের কয়েকটি দোকান ঘুরে দুই লিটারের সয়াবিন তেল পাচ্ছি না। তাই বাধ্য হয়ে ১৬৬ টাকা লিটারে খোলা সয়াবিন তেল কিনেছি। 

জেসমিন আকতারের মতো অনেকেই এখন বাধ্য হয়ে খোলা সয়াবিন তেল কিনছেন। কোথাও কোথাও আবার বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও সেই তেল কিনতে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে শর্ত। সয়াবিন তেলের সাথে কিনতে হচ্ছে একই কোম্পানির অন্য কোনো পণ্য। সেই পণ্য না কিনলে তেলের দাম রাখা হচ্ছে বেশি। 

পুরো জয়পুরহাট জেলাতেই বোতলজাত সয়াবিন তেলের চরম সংকট বিরাজ করছে। গত প্রায় ১৫ দিন ধরে বাজারে এ অবস্থা চলছে।

শহরের পূর্ব বাজার, নতুনহাট, মাছুয়া বাজারের পাইকারি ও খুচরা মুদিখানার দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানির ডিলাররা দোকানিদের কাছে বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করছেন না। বসুন্ধরা, ফ্রেশ, সান, তীর সয়াবিন তেল কোম্পানির ডিলার ও সরবরাহকারীরা সীমিত তেল সরবরাহ করছেন, সেটিও শর্ত সাপেক্ষে। তাদের দেওয়া শর্ত না মানলে তেল দেওয়া হচ্ছে না। বোতলজাত সয়াবিন তেলের সাথে সুগন্ধি চাল, নুডলস, শুকনা মরিচের প্যাকেট, হলুদের প্যাকেট, দুধের প্যাকেট, লবণ, চিনি, আটা কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে।

আল-আমিন নামে মাছুয়া বাজারের এক ক্রেতা বলেন, বাজারে এখন বোতল তেল পাওয়া যাচ্ছে না। দুই একটি দোকানে পেলেও কিনতে হয় শর্ত সাপেক্ষে। তেলের সাথে গুঁড়া মরিচ বা হলুদের ৫টি করে প্যাকেট কিনতে হবে। আর পাঁচ লিটার তেল কিনলে চাল, নুডুলস এসব কিনতে হচ্ছে। আর এসব না কিনলে তেলের দাম বেশি নিচ্ছে। উপায় না পেয়ে বেশি দামেই পাঁচ লিটার তেল কিনেছি। ৮৬০ টাকা দাম ধরেছে।

শহরের রেলগেট এলাকার আজাদ হোটেলের কর্মচারী রতন হোসেন বলেন, কয়েকটি দোকান ঘুরে একটি দোকানে দুই লিটার সয়াবিন তেলের বোতল পেয়েছি। বোতলের গায়ে ৩৩৪ টাকা দাম লেখা রয়েছে। আমার কাছে এটির দাম ধরেছে ৩৮০ টাকা।

জয়পুরহাট পূর্ব বাজারের মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্সের মালিক মো. রুহুল আমিন মোল্লা বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। ডিলারের কাছে একটি কোম্পানির পাঁচ লিটারের চারটি সয়াবিন তেলের বোতল পেয়েছি। চারটি সয়াবিন তেলের সঙ্গে ১২ পিস নুডুলসের প্যাকেট কিনতে হয়েছে। তারা দুই লিটারের সয়াবিন তেল দিচ্ছে না। পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের গায়ে ৮১৮ টাকা দাম লেখা রয়েছে। পাইকারিতেও এই দামেই নিয়েছে। তাই আমাদের বেশি দামে তেল বিক্রি করতে হচ্ছে।

মাছুয়া বাজারের খুচরা দোকানি শ্যামল সাহা বলেন, কোম্পানির শর্তের কারণে বোতলের সয়াবিন কয়েকদিন ধরে কেনা হয়নি। আমার দোকানের কিছু নিয়মিত ক্রেতা আছে। তারা বোতলের সয়াবিন তেল ছাড়া কেনেন না। এই ক্রেতাদের কারণে বেশি দামে ২ লিটারের এক কার্টন তেল কিনতে হয়েছে। তেলের সাথে আমাকে ফ্রেশ কোম্পানির তিন ডজন দুধের প্যাকেট কিনতে হয়েছে। 

এ নিয়ে মেসার্স হাসান ট্রেডার্স নামে ফ্রেশ তেলের ডিলার মো. রঞ্জু বলেন, কোম্পানি থেকে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দোকান বন্ধ রেখেছি। তেলের চাহিদা দিলে কোম্পানি থেকে অন্য পণ্য নিতে হবে। কিন্তু দোকানিরা আমাদের কাছে এভাবে তেল কিনতে আগ্রহ হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জয়পুরহাটের কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো.মেহেদী হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বোতলজাত সয়াবিন তেল বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। বর্তমানে আমদানি কম হচ্ছে। তাই সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণে বাজারে বোতলজাত তেলের সংকট হয়েছে। 

চম্পক কুমার/এনএফ