রোকেয়ার জন্মভিটায় অতিথিদের উপস্থিতিতে বিলম্ব, ক্ষোভ অনুরাগীদের
নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৪২তম জন্ম ও ৯২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার জন্মভিটা মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দে নানা আয়োজন ছিল রংপুর জেলা প্রশাসন। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে অনুষ্ঠান সূচি থাকলেও অতিথিদের বিলম্বে উপস্থিতির কারণে ফুল হাতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় রোকেয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান থেকে আসা আগতদের।
তীব্র শীত উপেক্ষা করে রোকেয়া দিবসে অংশ নিতে সকাল ৯ টায় হাজির হন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও অভিভাবকসহ রোকেয়া অনুরাগীরা। কিন্ত দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অতিথিরা না আসায় ফিরে যান অনেকই। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিনেই দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করতে অতিথিদের বিলম্ব হওয়াকে রোকেয়ার প্রতি অবমাননা বলছেন বিক্ষুদ্ধরা।
বিজ্ঞাপন
কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, “নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়াকে নিয়ে আজও বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। রোকেয়ার জীবন সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা যে সমতার কথা শিখেছি, সেই আদর্শ অনুষ্ঠানের আয়োজনেও প্রতিফলিত হওয়া উচিত ছিল।”
বিজ্ঞাপন
রোকেয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা নিউ ফ্রেন্ডস প্রিক্যাডেট স্কুল বৈরাগীগঞ্জের শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস জেমি বলেন, “এমন গুরুত্বপূর্ণ দিনে সময়ানুবর্তিতা প্রত্যাশিত ছিল। বেগম রোকেয়ার মতো বিপ্লবী নারীর স্মৃতিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এমন উদাসীনতা দুঃখজনক। এটি যেন তার প্রতি অসম্মানের প্রকাশ।”
ফুল দিতে আসা নিউ ফ্রেন্ডস প্রিক্যাডেট স্কুল বৈরাগীগঞ্জের শিক্ষার্থী জুথি বলেন, “সকাল ৮টায় আসছি। ঠান্ডায় খুব কষ্ট হচ্ছে, ক্ষুধাও লাগছে। এখন চলে যাচ্ছি বাসায়।”
বেগম রোকেয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুবহা বলে, “সকালে ফুল নিয়ে এসেছি। কিন্ত এখন পর্যন্ত দিতে পারিনি। অনেক ঠান্ডা লাগছে।” আরেক শিক্ষার্থী আদিবা বলে, “তিন ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করার পরও অনুষ্ঠান শুরু হয়নি। এটা তো আমাদের জন্য কষ্টকর।”
আয়োজকরা বিলম্বের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবস ছাড়াও বিভিন্ন দিবসের কর্মসূচির কারণে অতিথিদের আসতে দেরি হয়েছে। তবে শিক্ষার্থী-শিক্ষক, রোকেয়া অনুরাগীসহ দর্শনার্থীরা এমন অব্যবস্থাপনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং ভবিষ্যতে সময়ানুবর্তিতা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।
জানা গেছে, রোকেয়া দিবস আয়োজনের অনুষ্ঠান সূচি অনুযায়ী সোমবার রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্মস্থান পায়রাবন্দে সকাল নয়টায় পুষ্পমাল্য অর্পণ, পতাকা উত্তোলন ও মেলার উদ্বোধন করার কথা ছিল। এর পর সকাল সাড়ে ১০ টায় রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রে বাংলা একাডেমি আলোচনা সভায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘রোকেয়ার অবরোধবাসিনী সামাজিক নকশার সেকাল-একাল’ এই শিরোনামে প্রবন্ধ পাঠ করার কথা ছিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক সিরাজাম মুনিরা’র।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল। আলোচক ছিলেন তারাগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এ. আই এম. মুসা এবং রংপুর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মো. মোতাহার হোসেন সুজন।
সকাল ৯ টায় অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মিঠাপুকুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র বর্মন উপস্থিত হলেও অন্যান্য অতিথিরা তখনো সেখানে ছিলেন না। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা পর দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে পায়রাবন্দে এসে তারা পুষ্পমাল্য অর্পনের মধ্য দিয়ে দিবসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
এ বিষয়ে রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, “শহরে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবসের একটি প্রোগ্রাম ছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমরা এসেছি এবং পুস্পমাল্য অর্পন করেছি।”
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসএমডব্লিউ