দুটি কিডনিই নষ্ট ছেলে পিন্টুর (৩৫)। ছেলেকে নিজের কিডনি দিয়ে বাঁচাতে চান মা টুনুয়ারা বেগম। তবে কিডনি প্রতিস্থাপনের টাকা যোগাড় করতে পারেননি তিনি। ছেলেকে বাঁচাতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন এই মা। 

মেহেরপুর সদর উপজেলার রাইপুর খন্দকার পাড়ার মুজাম শেখ ও টুনু খাতুনের একমাত্র ছেলে পিন্টু। বছর চারেক আগে বমির সঙ্গে গলা দিয়ে রক্ত বের হয় পিন্টুর। প্রাথমিক চিকিৎসার পরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে জানা যায় পিন্টুর একটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে তার আরেকটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে অন্ধকার নেমে এসেছে পিন্টুর পরিবারে। 

চার ভাই-বোনের মধ্যে পিন্টু সবার বড়। তার উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল গোটা পরিবার। একমাত্র উপার্জনক্ষম পিন্টুর অসুস্থতার কারণে গোটা পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। পিন্টুর বন্ধু-বান্ধব এবং এলাকাবাসী গত এক মাস ধরে সাধ্যমতো তার পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের সহযোগিতায় সপ্তাহে তিনদিন ডায়ালাইসিস চলছে তার। 

পিন্টুর মা টুনু খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছেলে তাকে বার বার বলে- মা আমি বাঁচতে চাই, আমাকে বাঁচাও। সন্তানকে বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দিয়ে ছেলের জীবন বাঁচাতে চাই। কিন্তু কিডনি প্রতিস্থাপন করতে যে অর্থের প্রয়োজন তা নেই। এজন্য কিডনি দিয়ে ছেলেকে বাঁচাতে চাইলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। বহু মানুষের কাছে ধরণা দিয়েছি। আত্মীয় স্বজনদের কাছে হাত পেতেও কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।

অসুস্থ পিন্টু বলেন, অনেক কষ্টের মধ্যে সংসার চলছে। স্বপ্ন ছিল নিজে সংসারের অভাব মোচন করবো। কিন্তু আমিও আজ অসুস্থ হয়ে পড়লাম। বর্তমানে স্ত্রী ও দুটি কন্যা সন্তান নিয়ে কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছি। 

পিন্টুর স্ত্রী রিক্তা খাতুন বলেন, কিডনি প্রতিস্থাপন ও চিকিৎসায় প্রায় ১০-১২ লাখ টাকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ডাক্তার। এতো টাকা যোগাড় করার সামর্থ্য আমাদের নেই। দেশ ও প্রবাসের কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি যদি আমার স্বামীকে বাঁচাতে সহযোগিতা করতেন তাহলে চিরকৃতজ্ঞ থাকতাম।

রাজধানীর সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হসপিটালের মেডিকেল অফিসার ডা. আসিফ ঢাকা পোস্টকে জানান, কিডনি রোগীর ডায়ালাইসিস অস্থায়ী চিকিৎসা। এই মুহূর্তে তার কিডনি প্রতিস্থাপন করাটা জরুরি। এটাই একমাত্র চিকিৎসা। কিডনি প্রতিস্থাপন হলে পিন্টু সুস্থ হয়ে উঠবেন।

মায়ের দেওয়া কিডনি সময় মতো প্রতিস্থাপন করা না হলে যে কোনো সময় নিভে যাবে পিন্টুর জীবনপ্রদীপ। অসুস্থ্য পিন্টুর জীবন বাঁচানোর জন্য মায়ের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না হয় সেজন্য সবার সহযোগিতা দাবি করেন এলাকাবাসী। 

মেহেরপুর সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমদের কাছে আবেদন করলে তাকে নিয়ম অনুযায়ী সহযোগিতা করা হবে।

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, পিন্টুর আবেদন পেয়েছি। সরকারিভাবে যতটুকু সহযোগিতা করা প্রয়োজন তাকে করা হবে। 

আর দশজন যুবকের মতো সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চান পিন্টু। সবার সহমর্মিতা আর সহযোগিতাই পারে পিন্টুকে বাঁচিয়ে রাখতে। পিন্টুর চিকিৎসায় সহায়তা করতে ০১৭৬১৫১৫৬০২ (বিকাশ) নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। 

আরএআর