‘গত কয়েক বছরে অনেক বাড়িঘর চোখের সামনে নদীতে চলে গেছে। সাম্প্রতিক বন্যায় ভাঙন আরও বেড়ে গেছে। বাড়ির আঙিনা ইতোমধ্যে নদীগর্ভে চলে গেছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ঘরবাড়িসহ বেড়িবাঁধও রক্ষা পাবে না।’—এভাবেই নদী ভাঙনের দুঃসহ স্মৃতির কথাগুলো বলছিলেন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার পূর্ব সোনাপুর এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া।

একই এলাকার বাসিন্দা সামছুল আলম বলেন, নদী ভাঙনে দুই শতাংশ ভিটেমাটি ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছি। এর আগেও আশপাশের অর্ধশতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

শুধু শাহজাহান বা সামছুলই নন, সাম্প্রতিক ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপদ। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার পূর্ব সোনাপুর ও আমতলা এলাকায় নদীভাঙন রোধে দ্রুত মুহুরী নদী খনন কার্যক্রম বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। 

এ সময় বক্তব্য দেন—আমিরাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুর উদ্দিন, সহসভাপতি আমির হেসেন, সাধারণ সম্পাদক নুর জামান, প্রচার সম্পাদক আবুল কালাম, কৃষকদল নেতা সিরাজুল হক, জেলা যুবদলের সদস্য ফারুক হোসেন, ইউনিয়ন যুবদল নেতা আবদুল হাই মুন্সি, আনোয়ার হোসেন, মো. সেলিম, স্বপন, ক্ষতিগ্রস্ত সিদ্দিক মাঝি, আবু সাঈদ, রিয়াদ হোসেন প্রমুখ।

মানববন্ধনের বক্তারা বলেন, মুহুরী নদীর এ এলাকায় নদীর বাঁক ও পতিত সরকারের সময়ে নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙন শুরু হয়। এবারের বন্যায় পানির তীব্র স্রোত থাকায় ভাঙন আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পূর্ব সোনাপুর ও আমতলা এলাকায় নদীভাঙন রোধে বাঁকা নদী সোজা করণে দ্রুত নদী খনন বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা।

ক্ষতিগ্রস্ত সিদ্দিক মাঝি বলেন, নদীর বাঁক ধীরে ধীরে বেড়িবাঁধের দিকে এগুচ্ছে। ঘরবাড়ি হারানোর ভয়ে রাতে ঠিকভাবে ঘুমাতে পারি না। মনে হয়, এই বুঝি সব ভেঙে নিয়ে গেল।

আমিরাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুর উদ্দিন বলেন, এখানকার কয়েক গ্রামের মানুষের বাড়িঘর ও সম্পদ বাঁচাতে নদী খননের বিকল্প নেই। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পানি সম্পদ উপদেষ্টা দায়িত্ব নিলে ভালো হয়।

প্রসঙ্গত, নদী ভাঙনে গত পাঁচ বছরে এ অঞ্চলের শতাধিক পরিবারের ভিটেমাটি নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। এবারের বন্যায় এ ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত বছরের ২৬ আগস্ট মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে পড়ার পরপরই প্রবল স্রোত আর বিপরীত দিক থেকে আসা জোয়ারের পানির তোড়ে নদীর কূলে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়ে মাটি ভেঙে নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে।

তারেক চৌধুরী/এএমকে