প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বিধবা রহিমার ঠাঁই হয়েছে গোয়ালঘরে
গাজীপুরের শ্রীপুরের বেকাসহারা গ্রামের বাসিন্দা রহিমা বেগম। প্রতিবন্ধী এক ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে ১৬ বছর আগে স্বামী মোর্শেদ আলী মারা যান। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে পরিবারটি। রহিমার স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পদ বুঝিয়ে দিতে তালবাহানা করছেন স্বজনরা।
এরই মধ্যে গত বছরের ঝড়-বৃষ্টিতে তার মাটির ঘরে বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অর্থাভাবে ঘর মেরামত করতে না পেরে অসহায় অবস্থায় প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে এখন ঠাঁই হয়েছে প্রতিবেশীর গোয়ালঘরে। সেখানেই গরুর সঙ্গে রাত কাটাতে হচ্ছে তাদের। দিনে মাছি আর রাতে মশার অত্যাচারে প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন রহিমা। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থায় থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি সহায়তায়।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রহিমা বেগমের বাড়িতে গিয়ে কথা হয়। রহিমা বেগম বলেন, ভিটে মাটিসহ অনেক কৃষিজমি স্বামী রেখে গিয়েছেন। তার মৃত্যুর পর থেকেই ভাই-ভাতিজাসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনরা তা দখল করে রেখেছে। আমার ছেলে প্রতিবন্ধী হওয়ায় তারা ওই সম্পত্তিতে লোভ করে। ছেলে মারা গেলে সম্পদের ভাগিদার তারা হবে। গত ১৬ বছরে তারা এক মুঠো চাল দিয়েও আমাদের সহযোগিতা করেনি। স্বামীর রেখে যাওয়া একমাত্র মাটির ঘরটিও গত বছরের বৃষ্টি-বাদলে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্বামীর ভাইদের কাছে সাহায্য চাইলেও তারা বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি আমার অসহায়ত্বের কথা প্রতিবেশীর কাছে জানালে তারা আমাকে গরু রাখার ঘরে থাকতে দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে প্রতিবেশীর গোয়ালঘরে আশ্রয় নিয়েছি। তবে মূল ভয়টা হচ্ছে কখন না জানি সম্পত্তির লোভে আমার প্রতিবন্ধী ছেলেকে মেরে ফেলে।
তিনি আরও বলেন, দিনে মাছির যন্ত্রণা, রাতে মশার কামড়ে গোয়ালঘরে বসবাস করা কষ্টকর। ছেলের শরীরে ক্ষত তৈরি হলেও চিকিৎসার সামর্থ্য নেই। নিজেও ঠিকমতো খেতে পারি না। ধারদেনা করে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। টাকার অভাবে অসুস্থ প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসাও করাতে পারছি না। তবে ধার দেনা করে একমাত্র মেয়ে মৌমিতাকে বিয়ে দিয়েছি।
বিজ্ঞাপন
তেলিহাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পেছনে একটি ছোট ঘর তুলে বসবাস করেন রহিমাকে আশ্রয় দেওয়া প্রতিবেশী মানিক মিয়া। তিনি বলেন, আমি একটি টিনশেড ঘরে দুটি কক্ষ তুলে বসবাস করছি। বারান্দার একটি অংশ কক্ষের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে গরু লালন পালন করি। হঠাৎ প্রতিবেশী রহিমা তার অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে আশ্রয় চান। প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে কোথায় যাবে, কী করবে? এসব চিন্তা করতে করতে সে ওই ঘরে বসবাসের অনুমতি চায়। মানুষ হয়ে মানুষকে ফিরিয়ে দিতে পারি না। মানবিক কারণেই গোয়ালঘরের একটি অংশে চৌকি দিয়ে তাদের থাকার ব্যবস্থা করেছি। রহিমার স্বামীর সম্পদগুলো যদি তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তাকে আমার গোয়ালঘরে বসবাস করতে হবে না। তবে নিজের জমি-সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও এভাবে গোয়ালঘরে থাকা অমানবিক।
অভিযোগের বিষয়ে রহিমার ভাসুরের ছেলে মাহবুব হাসান বলেন, জমির ভোগদখল দিচ্ছি না- এমন অভিযোগ সঠিক নয়। তবে কাগজপত্র ও বণ্টন নিয়ে শরিকদের মধ্যে মতবিরোধ থাকায় বিক্রি করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যারিস্টার সজিব আহমেদ জানান, ওই নারীর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এখন খোঁজ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা করবেন।
শিহাব খান/আরএআর