জিয়াকে মানুষের মন থেকে মুছে ফেলা যাবে না : টুকু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, জিয়ার নাম সব জায়গা থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল স্বৈরাচার হাসিনা। এমনকি বাচ্চাদের পাঠ্যবই থেকেও মুছে ফেলেছিল। জিয়া বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের হৃদয়ে বিরাজ করছে। তাকে মানুষের মন থেকে মুছে ফেলা যাবে না।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে সিরাজগঞ্জ পৌর ভাসানী মিলনায়তনে জিয়া পরিষদ সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার আয়োজনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, অনেকেই বলেন ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। যদি তাই হয় তাহলে তো তখন থেকেই যুদ্ধ শুরু হওয়ার কথা, কিন্তু তা হয়নি।
তিনি বলেন, ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালির ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল তখন এখন যেমন আওয়ামী লীগ গা ঢাকা দিয়েছে, তখনো তেমন গা ঢাকা দিয়েছিল। তখন বাঙালি যখন যা পারছে তাই নিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। তখন একটা কথা ভেসে আসলো, কি আসলো; আসলো- আমি মেজর জিয়া, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলাম। তখন মানুষ বুঝলো আমরা একা না, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী আমাদের সাথে আছে। সে সময়ে জিয়াউর রহমান ক্যাম্পে বসে যুদ্ধের পরিকল্পনাও করতেন, যুদ্ধেও যেতেন। তখন থেকেই জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মানুষের আস্থার নাম হয়ে ওঠে।
বিজ্ঞাপন
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে প্রথম গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনলেন। একদলীয় থেকে বহুদলীয় রাজনীতি শুরু করলেন। আপনারা ১৬ বছর জিয়াউর রহমানের নাম শোনেননি। আজ একটু বলি শোনেন, কেন আমরা জিয়াউর রহমানের দল করি। জিয়াউর রহমান ৭১-এ, ৭৫-এ সবচেয়ে প্রয়োজনের সময়গুলোতে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখানে নানান ধর্মাবলম্বী মানুষ থাকলেও তিনিই প্রথম বলেছিলেন, যে যেই ধর্মেরই হোক আমরা সবাই বাংলাদেশি। এই বাংলাদেশে যা অর্জন আছে তা সবই বিএনপি ও জিয়া পরিবারের।
তিনি বলেন, একটা কথা আছে, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। হাসিনা তো পালিয়েই গেছে এখন তার যে ভাগ্নি ছিল বিদেশের মন্ত্রী, তাকেও মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে, এখন হয়তো জেলেও যাওয়া লাগতে পারে।
টুকু বলেন, আমিতো মনে করি আমি সিরাজগঞ্জবাসীর গোলাম। আমি আপনাদের সেবা করে যেতে চাই।
সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহা. হাছানাত আলী বলেন, আমি সারা বাংলাদেশের সকল বই-পুস্তক তন্য তন্য করে খুঁজেও জিয়াউর রহমানের নামে গাবতলী ছাড়া অন্য কোথাও কোনো জমি আছে তা খুঁজে পাইনি। আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি বগুড়ার একজন ছেলে হিসেবে, জিয়াউর রহমানের এলাকার একজন মানুষ হিসেবে।
তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদের দিকে ইশারা করে বলেন, এই নারী নেত্রীকে পর্যন্ত শারীরিকভাবে আঘাত করা হয়েছে। কারা করেছেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে নানান অপকর্ম করেছেন তারা।
হাছানাত আলী বলেন, জিয়াউর রহমান জানতেন যদি স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার পরে জয়ী না হই তাহলে তাকে ফাঁসিতে ঝুলতে হবে, নাবালক ছেলেদের জীবন বিপন্ন হবে। তবুও তিনি ভয় পাননি। জিয়া এমন একজন সৈনিক ছিলেন যিনি গণতন্ত্র ফিরে এনেছিলেন। খালেদা জিয়া কখনো আপস করেননি। ফলে তার সন্তানের লাশ পর্যন্ত দেখতে হয়েছে তবুও তিনি হার মানেননি। শেখ হাসিনা আজ পালিয়ে গেছেন, কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া মাথা উঁচু করে বলেছিলেন- আমার বাংলাদেশের বাইরে কোনো বাড়ি নেই। আজ তিনি জননন্দিত হয়ে বাইরে চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন। আমরা আশা করি তিনি আবার দ্রুত আমাদের মাঝে ফিরেও আসবেন।
জিয়া পরিষদ সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শেখ কুদরত-ইএলাহীর সঞ্চালনায় ও সভাপতি অধ্যাপক আবু হাসিম তালুকদারের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু এবং জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা।
আলোচনা সভা শেষে শিশুদের মাঝে নানা প্রতিযোগিতার জন্য পুরস্কার বিতরণ করা হয় ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সংগীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। এ সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিল।
শুভ কুমার ঘোষ/আরএআর