ময়মনসিংহ নগরীতে যানজট নিয়ন্ত্রণে ৬টি রুটে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলাচলের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন। এতে ক্ষুব্ধ চালকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ইজিবাইক চলাচল বন্ধ রেখে সিটি কর্পোরেশন ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু প্রশাসন ৬টি রুটের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় ক্ষুব্ধ চালকরা বেশ কিছু অটোরিকশা ভাঙচুর করে যাত্রীদের লাঞ্ছিত করেন।

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ নগরীর জিলা পরিষদের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষুব্ধ পথচারী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ভাঙচুরকারীদের প্রতিরোধ করে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

এর আগে এদিন সকাল থেকে নগরীতে ইজিবাইক চলাচল বন্ধ রাখেন চালকরা। এতে সাধারণ মানুষের চলাচলে কিছুটা ভোগান্তি হলেও নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে যানজট না থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করেন নগরবাসী।  

সূত্র জানায়, বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ নগরীতে অনুমোদিত ইজিবাইক ৭ হাজার। এর মধ্যে ব্যাটারিচালিত মোটা ও চিকন তিন চাকার রিকশা ১২ হাজার থাকলেও প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ হাজার যান চলাচল করে। এতে দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। ফলে যানজটের ভোগান্তি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ১৮ জানুয়ারি নগরীর অভ্যন্তরীণ ৬টি রুটে ইজিবাইক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন। ফলে জিলা স্কুল মোড় থেকে নতুন বাজার হয়ে গাঙ্গিনারপাড়, সিকে ঘোষ রোড, দুর্গাবাড়ি রোড এবং স্বদেশি বাজারে ইজিবাইক চলাচল না করায় নগরী একেবারেই যানজটমুক্ত হয়। স্বস্তি প্রকাশ করেন সাধারণ মানুষ।

তবে চালকরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে ইজিবাইকে যাত্রী উঠছে না। এর প্রতিবাদে কয়েকদিন ধরে ইজিবাইক চালকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। গত রোববার বিকেলে ইজিবাইক চালকরা সার্কিট হাউস মাঠে জড়ো হয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে সোমবার সকাল থেকে নগরীর সকল রুটে অটো চলাচল বন্ধ রাখে। সেই সঙ্গে চালকরা প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে শহরের ভেতরে অটো ও রিকশা যেন না ঢুকতে পারে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন।

এদিকে দুর্ভোগ এড়াতে প্রশাসন শহরে রিকশা চলাচলের সুযোগ করে দেয়। ফলে সকাল থেকে নগরীতে যানবাহনের কারণে সাধারণ মানুষকে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে দেখলেও বেশির ভাগ মানুষ ইজিবাইক চলাচলের নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছে। পরে বিকেল ৩টার দিকে কয়েকশ চালক সিটি কর্পোরেশনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তারা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

নগরীর বাসিন্দা মো. হাফিজুল ইসলাম বলেন, নগরীতে অটো চলাচলের কারণে যানজট হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু অটো আবার বন্ধ করে দিলেও চালকদের যেমন সমস্যা তেমনি আমরা যারা সাধারণ মানুষ আছি তাদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে অন্য রিকশাগুলো অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে। সেগুলো তদারকি করা প্রশাসনের দরকার।  

দুর্গাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিত নগরী হওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি দেওয়ায় যত সমস্যা হচ্ছে। গেল কয়েকদিন ধরে গাঙ্গিনারপাড় ইজিবাইক ঢুকতে না পারায় কোনো যানজট নেই। আমরা চাই সকল কিছু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকুক।

ইজিবাইক চালক হাসান মিয়া বলেন, আমরা লাইসেন্স নিয়েছি পুরো নগরীতে চলাচল করার জন্য, কোনো সুনির্দিষ্ট রুটে নয়। ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করে দিয়ে যানজট কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আমরা সিটি কর্পোরেশন এলাকা ছাড়ব না।

অপরদিকে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ইজিবাইক চালক, সংশ্লিষ্ট সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন। এতে সকলের মতামতের ভিত্তিতে নগরীর যানজট নিয়ন্ত্রণে ৬টি রুটের নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়। তবে এ সময় ইজিবাইক চালকদের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রেশন নবায়নের সময় বৃদ্ধি, ফি কমানোসহ কয়েকটি দাবি মেনে সভার সমাপ্তি করেন জেলা প্রশাসক মো. মুফিদুল আলম।  

পরে ইজিবাইক চালক ও মালিক প্রতিনিধিরা সিটি কর্পোরেশনের সামনে অবস্থানরত শ্রমিকদের বিষয়টি জানালে উপস্থিত চালক ও মালিকদের একটি অংশ সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও অপর অংশটি বিক্ষুব্ধ হয়ে নগরীর জিলা পরিষদের সামনের সড়কে হামলা করে ৫ থেকে ৭টি অটোরিকশা ভাঙচুর করেন। এ সময় তারা যাত্রীদের টেনে হিঁচড়ে অটো উল্টে ফেলে দেন। এতে কয়েকজন নারী ও শিশু যাত্রী আহত হন। এ সময় ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় ব্যবচসায়ী ও পথচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ভাঙচুরকারীদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যান।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ইজিবাইক চালকদের কারণে নগরীতে যেন কোনো ভোগান্তি সৃষ্টি না হয় সে জন্য প্রশাসন কাজ করছে। এতে পুলিশের নজরদারি রয়েছে।

আমান উল্লাহ আকন্দ/আরএআর