ভাগ্য ফেরাতে ৭ বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান মো. সোহেল রানা (২৯)। দাঁতে ব্যথা নিয়ে সৌদির দাম্মাম শহরের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে টানা ২৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে জীবনযুদ্ধে হেরে বাড়ি ফিরেছেন।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সুবর্ণচর উপজেলার নিজ বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে তার জানাজায় প্রায় হাজারও মানুষ অংশ নেন। 

সোহেল রানা নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চর পানা উল্লাহ গ্রামের হোসেন হাজী বাড়ির মো. ইউসুফের ছেলে।

জানা যায়, ২০১৭ সালে সৌদি পাড়ি জমান সোহেল। চার বোন আর এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। দাঁতে ব্যথা নিয়ে ১ জানুয়ারি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করান সহকর্মীরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। 

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সোহেলের মরদেহ নিজ বাড়িতে আসলে স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বিকেলে বাড়ির সামনের মাঠে জানাজা শেষে নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে শায়িত করা হয়। 

সোহেল রানার প্রতিবেশী আব্দুল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সোহেল রানার ব্যবহার অনেক ভালো ছিল। দেখা হলেই তিনি হাসিমুখে কথা বলতেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার জানাজায় অংশগ্রহণ করার জন্য লক্ষ্মীপুর ও আশপাশের জেলা থেকেও মানুষজন এসেছে। তার এমন মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। চার বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার ইচ্ছা ছিল সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবে, অভাবগুলো দূর করবে। কিন্তু আজ তিনি পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। 

সোহেল রানার বাবা মো. ইউসুফ বলেন, সোহেল পড়াশোনা রেখে পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করতে প্রবাসে পাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু ৭ বছরের মাথায় আজ কফিনবন্দি হয়ে ফিরেছে। আমাদের পারিবারিক কবরস্থানে আমার বাবাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করেছি। আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন।

জানাজায় অংশ নেওয়া ইউপি সদস্য মো. আবুল কাশেম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাড়ি চালানো শেষে হঠাৎ সোহেল রানার দাঁতে ব্যথা ওঠে। সে প্রায়ই দাঁতের সমস্যায় ভুগতেন। হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে ডাক্তার জানান তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। সবশেষে তার ফুসফুস খারাপ হয়ে যায় এবং শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

চরজব্বর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু কাউছার বলেন, সোহেল ফিরবে এটা সবার স্বপ্ন ছিল আকাঙ্ক্ষা ছিল। কিন্তু এই ফেরা জীবনের শেষ ফেরা হবে তা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি। এমন আকস্মিক মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এক নজর মরদেহ দেখার জন্য আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ভিড় করেন। জানাজা শেষে তাকে অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ বিদায় দিয়েছে সবাই। 

হাসিব আল আমিন/এমএন