৭ ঘণ্টা পর থানা থেকে ছাড়া পেলেন যুবদল নেতা, তদন্ত কমিটি গঠন
জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. হাবিবুল্লাহ আল মেজবাহর সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনায় থানায় আটক জেলা যুবদলের সাবেক সদস্য সচিব মুক্তাদুল হক আদনানকে সাত ঘণ্টা পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে আদনানকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে শিশুর চিকিৎসা নিয়ে ডা. হাবিবুল্লাহ আল মেজবাহ ও যুবদল নেতা আদনানের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে চিকিৎসকের দাবির প্রেক্ষিতে চাপের মুখে পড়ে পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যান।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, যুবদল নেতার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনার পর বিকেল ৪টার দিকে ডা. হাবিবুল্লাহ আল মেজবাহ পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। আগামী পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন কমিটিকে জমা দিতে বলা হয়েছে। থানা পুলিশ কোনো মামলা না পাওয়ায় মুক্তাদুল হক আদনানকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছেড়ে দেন।
জানতে চাইলে মুক্তাদুল হক আদনান বলেন, আমি কোনো অভিযোগ করিনি। ওই সময় হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা হচ্ছিল। এজন্য থানায় আনা হয়েছিল। আমাকে আটকে রাখা হয়নি।
বিজ্ঞাপন
জয়পুরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ আল মামুন বলেন, হাসপাতালের কেউ থানায় অভিযোগ করেননি। বেশি সময় তো কাউকে আটক রাখতে পারি না। তাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে আদনানকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আদনানের পক্ষের কেউ অভিযোগ করেননি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ঘটনায় ওই চিকিৎসক পুলিশের কাছে বিকেল ৪টার দিকে অভিযোগ দেন। এখন পুলিশ সুপার অভিভাবক হিসেবে নিষ্পত্তি করলে তো কিছু করার থাকে না। আর আমরা হাসপাতালের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কেন এমন ঘটনা ঘটলো এবং পরবর্তীতে এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে সেজন্য কমিটিতে সুপারিশ করতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছোট একটি ভুল বোঝাবুঝি থেকে এমন ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রোববার সকাল ১০টার দিকে শিশু সন্তানের চিকিৎসা করাতে জরুরি বিভাগে আসেন মুক্তাদুল হক আদনানের স্ত্রী। তাদের শিশু সন্তানের কপালে ক্ষত ছিল। সেসময় জরুরি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন ডা. হাবিবুল্লাহ আল মেজবাহ। চিকিৎসক সেখানে সেলাই দিতে চান। তখন মুক্তাদুল হক আদনান আসবেন বলে স্ত্রী একটু অপেক্ষা করতে বলেন। এরপর শিশুর কপালে কসমেটিক সেলাই দিতে বলা হয়। তখন চিকিৎসক তাদের বলেন- কসমেটিক সেলাই আপনারা বোঝেন। এটি করতে ওটি রুমে নিয়ে যেতে হবে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর হাসপাতালের সকল চিকিৎসক সেবা বন্ধ করেন। একই সময় হাসপাতালের সকল নার্স ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সেবা বন্ধ করেন। দুই ঘণ্টা হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়েন রোগীরা।
খবর পেয়ে প্রশাসন-পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন। তারা উভয় পক্ষের কথা শোনেন। একপর্যায়ে চিকিৎসকদের দাবির প্রেক্ষিতে মুক্তাদুল হক আদনানকে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ সদর থানায় নিয়ে যান। দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারকসহ তার কক্ষে চিকিৎসকদের সঙ্গে ডিসি আফরোজা আকতার চৌধুরী, এসপি মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব, সিভিল সার্জন মুহা. রুহুল আমিন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেনসহ সংশ্লিষ্টরা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সোয়া ১২টার দিকে বৈঠক শেষ হলে সেখানে সিদ্ধান্তের বিষয়ে কেউ কথা বলেননি। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আননানকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
চম্পক কুমার/আরএআর