আদরের সন্তান মিরাজকে হারানোর শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই স্বামীকে হারালেন মোহছেনা বেগম। শহীদ মিরাজ ঢাকার যাত্রাবাড়িতে লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরি করে সংসারের খরচ যোগাতেন। জুলাই আন্দোলনে সেই আদরের সন্তান মিরাজ নিহত হওয়ার পর সংসারের হাল ধরেছিলেন মিরাজের অসুস্থ বাবা আব্দুস সালাম। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনিও মৃত্যুবরণ করেন।

রোববার বিকেলে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে বিকেলে বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বিশেষ অতিথির বক্তব্য দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে অসুস্থ হোন। তিনি আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বারঘড়িয়া আনছার খাঁর পুকুর পাড়া এলাকার বাসিন্দা। আব্দুস সালামও মারা যাওয়ার পর মিরাজের ছোট দুই ভাই মেজবাউল ও সিরাজুলের লেখাপড়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে দাওয়া পত্র পান জুলাই আন্দোলনে শহীদ মিরাজের বাবা আব্দুস সালাম। রোববার অনুষ্ঠান শেষে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দারসহ তার ব্যাক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শহীদ মিরাজ স্টোরে গিয়ে অতিথিদের সাথে ফটোসেশন করেন। এরপর অতিথিরা বিদায় নিলে নিজ বাড়ি ফিরেন আব্দুস সালাম। পথে হঠাৎ বুকের ব্যাথা অনুভব করলে স্থানীয়রা তাকে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ (ভার) রবিউল আলম বলেন, বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠান শেষে সবাই মিলে শহীদ মিরাজ স্টোরে যায়। সেখানে অতিথিরা তার ব্যবসার খোঁজ খবর নেন। সেখানে ফটোসেশনও করা হয়। এরপর বাড়ি ফেরার পথে তিনি অসুস্থ হয়ে যান। তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা জানান হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন।

মোহছেনা বেগম বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। তিনি সন্তানের পর স্বামীকে হারিয়ে পাগল প্রায়। বিলাপ করে বলতে থাকেন, ‘হামাক এলা কায় দেকপে?  কায় চালাবে এ সংসার? কায় দেখপে ছোট সন্তানদের?’

উল্লেখ্য, জুলাই আন্দোলনে নিহত মিরাজ হত্যা মামলার বাদী ছিলেন শহীদ মিরাজের বাবা আব্দুস সালাম। ঢাকা যাত্রাবাড়ি থানার এ মামলার বিচার কাজ শুরুর আগেই বাদীর মৃত্যু মামলা নিয়ে দুঃচিন্তায় পরিবার।

নিয়াজ আহমেদ সিপন/আরকে