জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেছেন, চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের শহীদদের হত্যাকারীদের বিচার বিলম্ব করে কোনো টালবাহানা আমরা মেনে নেব না। জাতি মেনে নেবে না। অনেকে সংস্কারের কথা বলেন নির্বাচনের কথা বলেন কিন্তু সংস্কার আর বিচারের দাবিকে তিন নম্বরে নিয়ে শুধু নির্বাচন চাওয়া কী ঠিক হবে?  আমরা সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন- এই তিনটি কাজ করে যাওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চব্বিশের রক্তস্নাত শহীদদের তথ্য সম্বলিত ‘২য় স্বাধীনতার শহীদ যারা’ শীর্ষক স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষ্যে রংপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, আমাদের বোনেরা, বিধবা স্ত্রীরা যেন দেখতে পায় তাদের স্বামী হত্যার বিচার হয়েছে। ইনশাআল্লাহ সেটা আমরা নিশ্চিত করব। আমরা ৭১৭ জন শহীদ ও তাদের পরিবারের তথ্যসহ ১০ খণ্ডের একটি স্মরণিকা প্রকাশ করছি। আরও ৯৩ জন শহীদের তথ্য সন্নিবেশিত করার জন্য আরও দুটি খণ্ডের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই ১২টি খণ্ডে শহীদদের অবদানের কথা, তাদের পরিবারের কথা রয়েছে। কোথাও কোনো ভুল তথ্য থাকলে সেটি সংশোধনও করা হবে।

শহীদদের প্রতি সম্মান এবং তাদের অবদান, অম্লান ও জাগ্রত রাখতে ‘২য় স্বাধীনতার শহীদ যারা’ শীর্ষক স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ জামায়াতে ইসলামী নিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ যেন চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস ভুলে না যায়, সেটির জন্য ‘২য় স্বাধীনতার শহীদ যারা’ শীর্ষক এই স্মরণিকা প্রকাশ। এটি বিচার সহায়ক হিসেবে আইনজীবীদের কাজে লাগবে। এই স্মরণিকা আমাদের পক্ষ থেকে ডিসি, এসপি, আইনজীবী সমিতিসহ গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গাতেই পৌঁছে দেব। 

চব্বিশের জুলাই বিপ্লবকে ২য় স্বাধীনতা বলার কারণ প্রসঙ্গে আবদুল হালিম বলেন, আমাদের স্বাধীনতা সাতচল্লিশ, আমাদের স্বাধীনতা এসেছিল একাত্তরে। স্বাধীনতার জন্য আমাদের দেশের মানুষ নব্বই সালেও জীবন দিয়েছিল। চব্বিশের জুলাই বিপ্লবকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলার কারণ স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও আমরা কথা বলতে পারতাম না। আমরা মসজিদে নির্বিঘ্নে নামাজ পড়তে পারতাম না। জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বায়তুল মোকাররমে ১০ বছর নামাজ পড়তে যেতে পারেননি। বিয়ের অনুষ্ঠানেও আমরা যেতে পারিনি। এজন্য মানুষ বলে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বিভিন্ন স্লোগান ও বক্তব্যের নামে জাতিকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। আমরা মনে করি আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতি হতে চাই। বাংলাদেশ প্রশ্নে আমরা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব। আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি থাকবে। আমরা একেকজন একেক দল করতে পারি কিন্তু বাংলাদেশের প্রশ্নে আমি দেশের গর্বিত নাগরিক, এটি হবে আমাদের সকলের পরিচয়। 

জামায়াতের এই নেতা বলেন, বাংলাদেশে আগ্রাসী শক্তির থাবা বিস্তার করে রেখেছিল। রংপুরের তিস্তা মহাপরিকল্পনা তারা বাস্তবায়ন হতে দেয়নি। সেই শত্রুকে চিহ্নিত করতে হবে। বাংলাদেশের শত্রুকে চিহ্নিত করতে হবে। এই চিহ্নিত করার মূল লক্ষ্য হচ্ছে আমরা জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে হেফাজত করব।  শহীদ ফেলানীর মরদেহ কাঁটাতারে বিদ্ধ হয়ে থাকার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বও বিদ্ধ হয়েছিল। শহীদ ফেলানীর মতো আর কারো জীবন যাক, এটা আমরা চাই না। 

আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবার রহমান বেলাল ও জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানীসহ শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির এ.টি.এম আজম খান।

একই সময়ে ঢাকাস্থ জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান থেকে সরাসরি লাইভে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর