চাঁপাইনবাবগঞ্জে মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিল উপলক্ষ্যে চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সংসদ ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হারুনুর রশিদ।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চাঁপাইনববাগঞ্জ শহরের টাউন হাইস্কুল মাঠে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর বিএনপির ১৫ নং ওয়ার্ড কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভায় এ অভিযোগ করেন। 

হারুনুর রশিদ বলেন, আমার বাড়ির কাছে একটি তাফসির মাহফিল আগামী ২২ তারিখ অনুষ্ঠিত হবে। তাফসিরকারক হিসেবে মিজানুর রহমান আজহারী সাহেব আসবেন। এক মাসব্যাপী জেলাজুড়ে প্রচার চলছে। আর এক মাসব্যাপী চাঁদাবাজিও চলছে। সমস্ত জায়গায় চাঁদাবাজি চলছে। ব্যাংক, শিল্পকারখানায় চাঁদাবাজি এবং মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদাবাজি চলছে। ওটা কি তাফসির মাহফিল হচ্ছে, আমি মিজানুর রহমান আজহারী ভাইকে অনুরোধ করবো আপনি জনগণের সামনে হিসাব দেবেন, বিভাগীয় সমাবেশ করবেন চাঁপাইবনবাগঞ্জে, কিন্তু তাফসির মাহফিলের নাম করে কেন? এই তাফসিরের সভাপতিত্বে করছে জামায়াতের (জেলা) আমির আবু জার গিফারী আর প্রধান অতিথি কে? নুরুল ইসলাম বুলবুল। তাহলে এটা তাফসির নাকি জামায়াতের তাফসির। তাই এই সমস্ত বিষয়ে জনগণ অত্যন্ত সজাগ আছে।

তাফসির মাহফিল নিয়ে তিনি আরও বলেন, জামায়াতের মৌলভীদের দেখছি বিভিন্ন জায়গায় তাফসির মাহফিলের নাম করে দলীয় সভা করে বেড়াচ্ছে। এটা মুনাফেকি এবং জনগনের সঙ্গে প্রতারণা। আপনি তাফসির করবেন কোরআন-হাদিসের আলোকে আলোচনা করবেন কিন্তু তাফসির করতে গিয়ে জনগণকে হাত তুলাচ্ছেন আর বলছেন ইসলামের পক্ষে কারা কারা আছেন হাত তুলেন। যখন তারা হাত তুলছে তখন আবার বলছেন কারা কারা বুলবুলের পক্ষে আছেন? তাফসিরে বসে এই ধরনের আলোচনা এক প্রকারের মুনাফেকী। আবার কখনো কখনো তাফসীর মাহফিলে হারুন এমপি আবার কখনো ফখরুল ইসলামকে নিয়ে সমালোচনা করছেন। এই ধরনের বক্তব্য যারা দিচ্ছেন, তাদেরকে বলবো এই ধরনের বক্তব্য থেকে বিরত থাকবেন।

ধানমন্ডি ৩২ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে হামলার প্রসঙ্গ টেনে হারুনুর রশিদ বলেন, যারা বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছিল, সারাদেশে তাদের নির্মম পরিণতি হয়েছে এবং জনগণের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। হারাম টাকা দিয়ে তারা যে সমস্ত বাড়িঘর ও স্থাপনা নির্মাণ করেছিল সেগুলো আজকে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কারণ দীর্ঘ ১৫ বছর তারা দেশের মানুষকে গুম করেছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা করেছে এবং হাজার হাজার মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বাড়ি ছাড়া করেছে। তার বহিঃপ্রকাশ এখনো থেমে নেই।

অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম নিয়ে আমি বিষণভাবে উদ্বিগ্ন। কারণগত ছয় মাস আগে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। বিএনপিসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এই সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল, যাতে এই সরকার ফেল না করে, কিন্তু দিনের পর দিন আমরা হতাশ হচ্ছি। এই দেশের ছাত্র-জনতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙছে। এর দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে, এই ব্যর্থতার জন্য দায়ী সরকার। কারণ এই সোনার বাংলাদেশে এখনো কেন শেখ মুজিবের মুর‌্যাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তারসহ  তার পরিবারের নাম বিদ্যমান আছে। এছাড়া জনগণ চায় শেখ হাসিনাসহ তার নেতাকর্মীদেরকে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হোক।

নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা নিয়ে তিনি বলেন, প্রফেসর ইউনূসের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে স্বল্পতম সংস্কারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যতদূর সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হোক। যত দ্রুত সম্ভব নির্বচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। নির্বাচনের পথে হাঁটুন। জনগণের মধ্যে স্বস্তি ও আশ্বাস ফিরিয়ে দেন। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মাসিদুল হক নিখিলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল বারেক, থানা কৃষক দলের সদস্য সচিব তাসেম আলী, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক তবিউল ইসলাম তারিফ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান অনু, যুবদল নেতা মজিবুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক জামিউল হক সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সামিরুল ইসলাম পলাশ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন আক্তার, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সারোয়ার জাহান, সহ-সভাপতি মিম ফজলে আজিম প্রমুখ।

আশিক আলী/আরএআর