কাজে আসছে না ৩ কোটি টাকার সরকারি বিপণিবিতান
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান বাজারের মাংসের ব্যবসায়ী মালেক মিয়া। বাজারের পুরোনো জায়গায় গরুর মাংসের ব্যবসা করেন। বাজারের টিনের ছাউনি বেশিরভাগ জরাজীর্ণ অবস্থা। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে কাদাপানিতে নিমজ্জিত হওয়ার কারণে ক্রেতা সংকটে থাকতে হয়। ব্যবসা চালানো হয়ে পড়ে কষ্টসাধ্য। শুধু মালেক মিয়া নয়, তার মতো নগরবাথান বাজারের শতাধিক ব্যবসায়ীকে এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বাজারের ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য তিন বছর আগে নগরবাথান বাজারে একটি বিপণিবিতান নির্মাণ করে সরকার। ব্যয় হয় তিন কোটি টাকার বেশি। উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসায়ীদের আধুনিক সুবিধা দেওয়া, ক্রেতাদের কেনাকাটা সহজ করা। কিন্তু সেই বিপণিবিতান আজও পড়ে আছে তালাবদ্ধ অবস্থায়। অভিযোগ আছে, ভেতরের নকশা ব্যবসার উপযোগী নয়, আবার অনেকে বলছেন, দোকান বরাদ্দ নিয়ে রয়েছে অনিয়ম। ফলে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়েই পুরোনো, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেচাকেনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, নগরবাথান বাজারে ৩ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (দোকান) রয়েছে। বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে ব্যক্তি মালিকানায়। বাজার উন্নয়ন বলতে তিনটা টিনশেডের হাট রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বাকি জায়গায় খোলা আকাশের নিচে আর কিছু খড়ের চালা তৈরি করে দোকান সাজিয়ে বসেন। সরকারিভাবে বাজারটির উন্নয়ন ও ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে সেখানে ৩ কোটি টাকা ব্যয় করে একটি দ্বিতল মার্কেট নির্মাণ করে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও আজও চালু করা হয়নি।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা এলজিইডি অফিস থেকে জানা যায়, দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালে বাজারটির উন্নয়নে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। ওই বছরের আগস্ট মাসে দরপত্র জমা নিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে। শেষ হয় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। এই ভবনের দ্বিতীয় তলায় মোট ১০টি দোকান এবং নিচে মাংস ও মাছ বিক্রয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু দুই বছর পার হয়ে গেলেও সেখানে কোনো ব্যবসায়ী দোকান নিতে আগ্রহী হননি।
বিজ্ঞাপন
মাংস ব্যবসায়ী মালেক মিয়া আক্ষেপ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন বিল্ডিং থাকতে আমাদের কেন এখানে বসতে হবে? বর্ষায় হাঁটু পানি, গরমে দম বন্ধ করা পরিবেশ। কেউ আমাদের কথা ভাবে না। বাজারে নতুন ভবন হলেও সেখানে ব্যবসা করার সুযোগ নেই। দ্রুতই এই ভবনটি উদ্বোধন করে ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া হোক।
মুদি ব্যবসায়ী আমির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা হাটে খোলামেলা জায়গায় বাঁশের খুঁটির টিনের ছাউনি দিয়ে টং দোকানে ব্যবসা করি। শীতের সময় কোনো সমস্যা না হলেও বর্ষাকালে কাদাপানিতে খুব সমস্যা হয়। বাজারে নতুন ভবন হলেও সেখানে ব্যবসা করার সুযোগ নেই। ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না হওয়ায় কুকুর-শিয়ালের বসবাস শুরু হয়েছে।
মাংস ব্যবসায়ী আজিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৫-১৬ বছর ধরে এই বাজারে জরাজীর্ণ জায়গায় নিচে ব্যবসা করে আসছি। পাশে বিপণিবিতান নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে বসে ব্যবসা করার কথা। আজও সেটা সম্ভব হয়নি। কবে থেকে সেখানে বসতে পারব সেটাও জানি না।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে বিপণিবিতানটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর ২০২২ সালে ভূমি অফিসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসন এটা নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আশা করি দ্রুতই ভবন ব্যবসায়ীদের হস্তান্তর করে চালু করা সম্ভব হবে।
ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে এই বিপণিবিতান নির্মাণ করা হয়েছিল। এর আগে দোকান বরাদ্দ দেওয়াসহ বিভিন্ন জটিলতা ছিল। একটা কমিটি করা হয়েছে। খুব দ্রুতই এটা উদ্বোধন করা হবে। যাতে ব্যবসায়ীরা সুন্দর পরিবেশে ব্যবসা করার সুযোগ পাবে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরএআর