ওসমান পরিবারের ৩ সদস্যের নামে সেতু-মহাসড়ক
নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের প্রতি আবারও নিজের ভালোবাসার নিদর্শন স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই পরিবারের প্রয়াত ৩ সদস্যের নামে শীতলক্ষ্যা সেতুসহ দুটি আঞ্চলিক মহাসড়কের নামকরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এদিকে সরকারের এই ঘোষণায় নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। বিশেষ করে জেলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
বিজ্ঞাপন
তারা বলছেন, সব স্বাধিকার-স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা পালনকারী এই পরিবারের প্রয়াত ৩ সদস্যের নামে নারায়ণগঞ্জবাসীর ৩ যুগের প্রাণের দাবি শীতলক্ষ্যা সেতুসহ দুটি মহাসড়কের নামকরণ করে আমাদের সম্মানিত করা হয়েছে।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী জানান, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছায় শীতলক্ষ্যা সেতুসহ ২টি মহাসড়কের নাম এমন তিনজন ব্যক্তির নামে নামকরণ করা হলো যারা রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল জানান, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ের ভূমিকা তুলে ধরে ২০১৪ সালের সংসদ অধিবেশনে ওসমান পরিবারের পাশে থাকার কথা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন ৭৫ পরবর্তী সময়ে ভারতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের যে অল্প কয়েকজন খোঁজখবর নিতেন তাদের মধ্যে ছিলেন প্রয়াত শামসুজ্জোহা ও তার স্ত্রী নাগিনা জোহা।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু পরিবারকে মুক্ত করতে প্রয়াত শামসুজ্জোহার গুলি খাওয়া, ৭৫-এর পরে নববধূকে রেখে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে প্রয়াত নাসিম ওসমানের প্রতিরোধযুদ্ধে যাওয়ার স্মৃতিচারণও করেন প্রধানমন্ত্রী। আজ সেই তিনজন ব্যক্তিকে সম্মান দেখিয়ে বর্তমান সরকার নারায়ণগঞ্জবাসীকেই সম্মানিত করেছে।
নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি খন্দকার শাহ আলম বলেন, নারায়ণগঞ্জের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মমত্ববোধ বরাবরই ছিল এবং আছে। শীতলক্ষ্যা সেতুটি নির্মাণের কারণে লক্ষ্যাপাড়ের এপার-ওপার সংযুক্ত হতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে লিংক রোডটি প্রশস্ত করা ও খানপুর থেকে ইপিজেড পর্যন্ত মহাসড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের যোগাযোগ ও উন্নয়নে মাইলফলক।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মহসিন মিয়া জানান, ওসমান পরিবার শুধু আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার সঙ্গেই নয়, নারায়ণগঞ্জের আপামর মানুষের আস্থার জায়গাটিতে প্রতিষ্ঠিত। তিনপুরুষ ধরে পরিবারটি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে তারা জনগণের হৃদস্পন্দন বুঝতে পারেন। যেটি প্রধানমন্ত্রীও অনুভব করেন বলেই তিনি নারায়ণগঞ্জবাসীকে সম্মানিত করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল বলেন, প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে উন্নয়ন ও সম্মান জানানোর যে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করলেন তা শুধু তার দ্বারাই সম্ভব। আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
জানা গেছে, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জননেতা একেএম শামসুজ্জোহা ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে প্রথম বাংলাদেশ বেতারে ভাষণ প্রদান করেন এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালতে প্রথম বাঙালি হিসেবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ঢাকা-৩০ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় হত্যার সময় তিনি শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর সঙ্গে একই সেলে বন্দি ছিলেন।
এছাড়াও তার স্ত্রী নাগিনা জোহা ছিলেন একজন ভাষাসৈনিক। ভাষা আন্দোলনে তিনি প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার বড়ছেলে প্রয়াত নাসিম ওসমান ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। তিনি শুধু মুক্তিযুদ্ধই করেননি, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর প্রতিশোধ নিতে প্রতিরোধযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
আশির দশকের শুরুতে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে নাসিম ওসমান যোগ দেন। তিনি আমৃত্যু জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। তিনি যথাক্রমে ১৯৮৬, ১৯৮৮, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টি ও মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
রাজু আহমেদ/এমএসআর