কুমিল্লায় ডা. তাসনিম জারা
‘মানুষ প্রশ্ন করতে শিখে গেলে এক শ্রেণির মানুষ বিপদে পড়ে যায়’
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা বলেছেন, মানুষ প্রশ্ন করতে শিখে গেলে সমাজের এক শ্রেণির মানুষ বিপদে পড়ে যায়।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কুমিল্লার দেবিদ্বারের রেয়াজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তিন দিনব্যাপী ‘দেবিদ্বার স্টুডেন্ট ফেস্টের’ সমাপনী দিনে আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিজ্ঞাপন
বক্তব্যের শুরুতে উপস্থিত দর্শকদের গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিসের গল্প শোনান তিনি। সে গল্পে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আড়াই হাজার বছর আগে গ্রীসে একজন লোক হঠাৎ করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তার কথা সবাই শুনতে শুরু করেন। লোকটা খুবই সাধারণ একজন ছিলেন। তার কোনো পদ-পদবি ছিল না। তার আশপাশে তরুণরা সবসময় ভিড় করতে থাকেন। কী বলেন তিনি। কেন তিনি এত জনপ্রিয়। তিনি একজন সাধারণ মানুষ। খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি করেন। দিনেরাতে একই কাপড় পরেন। তিনি তেমন গুরুত্বপূর্ণ কাজও করছেন না। কিন্তু তিনি সবার সাথে কথা বলেন। গ্রীসে তখন ক্রীতদাস ছিল। অনেক ক্রীতদাসের সঙ্গে তিনি কথা বলেন।
ক্রীতদাসদের মালিকের সঙ্গে তিনি কথা বলেন, যারা ধনী তাদের সঙ্গে কথা বলেন, দরিদ্রদের সঙ্গে কথা বলেছেন। মানুষ আগ্রহ নিয়ে তার কথা শুনতেন। তিনি কী এমন কথা বলতেন? তিনি আসলে কথা বলার চেয়ে বেশি বেশি প্রশ্ন করতেন। আমাদের সমাজের নানান মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন করতেন। সাহস কী, ক্ষমতা কী, সম্মান কী, ভালোবাসা কী। এসব প্রশ্ন তিনি সবাইকে করতেন। হাটেবাজারে যেখানেই যেতেন। যখন প্রশ্নগুলোর উত্তর মানুষ দিতো তখন তিনি আবার প্রশ্ন করতেন- কেন এটা চিন্তা করছেন আপনি।
বিজ্ঞাপন
প্রশ্ন করতে করতে তিনি মানুষকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতেন যেখানে মানুষ তার প্রশ্নের খাপটা ধরতে পারতেন। মানুষ বুঝতে পারতেন, আমি যে চিন্তাটা করছি সেখানে গ্যাপটা কোথায়। তিনি নিজে প্রশ্ন করে মানুষকে উত্তর শেখাতেন। তিনি যখন মানুষকে প্রশ্ন করতে শেখাচ্ছিলেন, তখন গ্রীসে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে দেয়। আড়াই হাজার বছর আগে প্রশ্ন করার জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আড়াই হাজার বছর পরেও প্রশ্ন করায় অনেককে মরতে হয়েছে।’
এসময় তিনি প্রসঙ্গ টেনে বলেন, যখন মানুষ প্রশ্ন করতে শিখে যায় সত্য কী, ন্যায় কী; তখন সমাজের এক শ্রেণির মানুষের বিপদ হয়ে যায়। আপনার কি গেইস (অনুমান) করতে পারেন কাদের বিপদ হয়? যেমন আমরা জুলাই-আগস্টে প্রশ্ন করতে শিখে গিয়েছিলাম, তখন কিন্তু এক শ্রেণির বিপদ হয়ে গিয়েছিল। যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের বিপদ হয়ে গিয়েছিল। আমরা সাধারণ ছাত্র-জনতা যখন প্রশ্ন করলাম কেন এমন হবে, তখন তারা যখন বিপদে পড়ে গেছে। তখন তারা আমাদের ভাই-বোনদেরকে মারা শুরু করেছে। এরপর এক পর্যায়ে তারাই বিতাড়িত হয়েছে।
এর আগে প্রথমবারের মতো কুমিল্লায় আসায় উৎফুল্লতা প্রকাশ করেন ডা. তাসনিম জারা। দেবিদ্বার স্টুডেন্টস ফেস্টে আমন্ত্রণ জানানোয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
আরিফ আজগর/আরকে