বান্দরবানে থামছেই না অবৈধ মাটি ও বালু উত্তোলন। জেলার লামা, আলীকদম, রুমা ও থানচি উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানেই রাজনৈতিক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে এসব অবৈধ বালু উত্তোলন।

উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে অবৈধ বালু উত্তোলন ও পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে অভিযুক্তদের কয়েক লাখ টাকা জরিমানাসহ জেল হাজতে পাঠানোর মতো শাস্তিও প্রয়োগ করা হয়েছে।

এতো কিছুর পরেও থামানো যাচ্ছে না অবৈধ পাহাড়ের মাটি কেটে বিক্রি ও বালু উত্তোলনের এই বাণিজ্য। বান্দরবান সদর উপজেলায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের অন্ধকারে স্থানীয় সুয়ালক খালের বালি উত্তোলন করে বাণিজ্যিকভাবে তা বিক্রি করছে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট।
 
স্থানীয়দের অভিযোগ বছরের প্রায় পুরো সময়েই স্থানীয় বাসিন্দাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য পানির চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হয় সুয়ালক খালের পানি। নদী হতে বালু তোলার কারণে স্বচ্ছ পানি ঘোলাটে হয়ে যায়, যা আর কোনো কাজে ব্যবহার করা যায় না বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। এভাবে বালি উত্তোলনের কারণে স্থানীয়দের পানির উৎস নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এসব বালু উত্তোলন ও সরবরাহের পেছনে সেল্টার দিচ্ছেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ৪নং সুয়ালক ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য আবদুল ছবুর।

এছাড়া বালু উত্তোলন ও পরিবহন দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক পরিচয় দেওয়া হান্নান সওদাগরসহ স্থানীয় উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি কামাল। 

জানা যায়, এই ইউনিয়নের সব বালু ও মাটি সরবরাহ, জায়গা ভরাটের সরকারি ও বেসরকারি কাজগুলো করেন ১নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. আবদুল ছবুর। তার কাজে সহযোগিতা করছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন সুবিধাবাদি নেতা। রাজনৈতিক পরিচয়ে তারা এ ধরনের কাজ করছেন তাই ঝামেলার ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করছে না বলে জানায় স্থানীয়রা।

এদিকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে পরিবহনের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বাস্তবায়নে বঙ্গ পাড়া হতে গনেশ পাড়া হয়ে সুয়ালক প্রধান সড়ক পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ চলমান নির্মিত রাস্তাটি। রাস্তার কাজ চলমান অবস্থায় রাতের বেলা বালু বোঝাই ট্রাক যাতায়াতের কারণে রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে এর স্থায়িত্ব কমে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মো. সুজন বলেন, আমরা তাদের নিষেধ করেছি, রাস্তার কাজ চলমান অবস্থায় ট্রাক চলাচল করা যাবে না। তারা রাতের বেলায় এ কাজটি করছে।

স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরজমিনে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ওই স্থান পরিদর্শনে গেলে প্রতিবেদকের উপস্থিতি বুঝতে পেরে, বালি উত্তোলনের নিউজ না কররা জন্য সমঝোতার প্রস্তাব দেন স্থানীয় যুবদলের নেতা মো. হান্নান সওদাগর।

পরে সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. কামাল এসে সমঝোতার জন্য মোবাইল ফোনে কথা বলিয়ে দেন আবদুল ছবুরের সঙ্গে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আবদুল ছবুর প্রতিবেদককে বলেন, সমস্যার কারণে এখন বালি তুলছি না। সবার সঙ্গে সমন্বয় হলে কাজ শুরু করব। এদিকে ২৮ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে পুনরায় বালি উত্তোলন শুরু করে সিন্ডিকেটটি। 

অভিযোগের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, বান্দরবান পার্বত্য জেলায় পাহাড়ের মাটি কাটা, জেলা প্রশাসন কর্তৃক বালি মহাল ঘোষণা ছাড়া, নদীর বালু উত্তোলন করে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি সম্পূর্ণ অবৈধ। দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থানটি পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এদিকে অবৈধভাবে খাল থেকে বালু উত্তোলন ও বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান, বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারুফা সুলতানা খান হীরামনি।

তিনি বলেন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয় এমন কোনো কিছুই করা যাবে না। এছাড়া এসব কাজের সঙ্গে যে বা যারা জড়িত তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে স্থানীয় সচেতন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে।

শহীদুল ইসলাম/আরকে