নাটোরের গুরুদাসপুরে স্কুল ছাত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা ও প্রধান শিক্ষক ফিরোজ আহমেদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে উপজেলার মাহমুদপুর উত্তরপাড়ায় এই কর্মসূচি পালিত হয়। এলাকাবাসীর আয়োজনে মানববন্ধনে ভুক্তভোগীর পরিবারের নিরাপত্তা ও অভিযুক্ত ফিরোজের দ্রুত বিচার এবং ফিরোজ বাহিনী কর্তৃক মারধর, হামলা ও মামলার সাক্ষীদের হুমকি প্রদানসহ নানা অপতৎপরতার প্রতিবাদ জানানো হয়।

গতকাল ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ফিরোজ আহমেদ ও তার সহযোগীরা ধর্ষণের শিকার ওই স্কুলছাত্রীর বাবা ও তৎকালীন গুরুদাসপুর থানার ওসির বিচার দাবি করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

মূলত এর জেরেই ভুক্তভোগীর পরিবার ও এলাকাবাসী আজ পুনরায় ফিরোজের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে।

মানবন্ধনে মামলার সাক্ষী মোজাম্মেল হক বলেন, আসামি ফিরোজ জামিনে বের হয়ে এসে আমাদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। এতে বিচারাধীন কাজ প্রভাবিত হচ্ছে। আমরা আদালতের কাছে অনুরোধ জানাই, ফিরোজের জামিন বাতিল করে দ্রুত কারাগারে পাঠানো হোক এবং বিচারকার্য সম্পন্ন করে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করুক।

ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থীর বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কী দিন আসলো ভাই, আমার মেয়েকে অপহরণের পর ধর্ষণ করিছে, সে কারণে মামলা করিছি। এখন উল্টা আমারই বিচার চায়। মামলার সাক্ষীদের হুমকি-ধামকি দেয়। আত্মীয়-স্বজন বাজারে গেলে মারধর করে। আমাকে আওয়ামী লীগ বানাচ্ছে। অথচ আমি ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। সে নিজেকে বিএনপির বড় নেতা বলে দাবি করে। বিএনপি নেতা হলে কি সে এগুলো করতে পারে? দেশে কি আইনকানুন কিছু নেই?’

মানবন্ধনে অংশগ্রহণ করা ওই এলাকার বাসিন্দা তাসলিমা বেগম বলেন, একজন শিক্ষক হয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে এরকম ঘটনা ঘটানোর পরেও সে কীভাবে মুখ দেখায়। এ ঘটনার জেরে আমাদের আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে গ্রামের অধিকাংশ মানুষদের নাজিরপুর বাজারে যেতে দেয় না। তাদের ওপর হামলা করে। আমরা এসবের পরিত্রাণ চাই। ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।

অভিযুক্ত ফিরোজ আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, তারা যে অভিযোগগুলো করেছে তার সবগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। আওয়ামী লীগের সময়ে এমন কোনো মামলা নাই যে হতো না। সে সময়ে তারা আমার নামে মিথ্যা মামলা করেছিল। আর গত দুই বছরে কেউ বলতে পারবে না যে আমি তাদেরকে নাটোর যেতে বাধা দিয়েছি বা তাদের ওপর হামলা করেছি। বরং তারাই আমার নামে নানান ধরনের মিথ্যা কথা রটাচ্ছে। 

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম সারওয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণের ওই মামলাটি পুলিশ তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। প্রধান শিক্ষকের (ফিরোজ আহমেদ) বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা প্রাপ্তি সাপেক্ষে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মরিয়ম মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। পরীক্ষা শেষে সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থানকালে একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফিরোজ আহমেদ তাকে একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে চলে যান। পরে রাজশাহীর এক বাসায় আটকে রেখে অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে কয়েক দফায় মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন ফিরোজ। পরে ওই দিন রাতে পরীক্ষার্থীর মা অপহরণের অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষক ফিরোজ আহমেদসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপরেই পুলিশ অভিযানে নেমে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রধান শিক্ষক ফিরোজ পালিয়ে যান। ঘটনাটি নিয়ে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ফিরোজকে গ্রেপ্তার করে। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর জামিনে বের হয়ে আসেন ফিরোজ।

গোলাম রাব্বানী/আরকে